স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভে কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতি
তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেলের নিচের অংশগুলো থেকে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভে কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতি সহ এর সম্পর্কিত আরো বেশ কিছু বিষয়ে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভে কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতি
- স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভে কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতিঃ ভূমিকা
- কৈ মাছের বর্ণনা
- কৈ মাছের বৈশিষ্ট্য
- কৈ মাছের খাদ্য তালিকা
- কৈ মাছের প্রকারভেদ
- কৈ মাছের পোনা উৎপাদন করার পদ্ধতি
- কৈ মাছের রোগ সংক্রান্ত তথ্য এবং বাঁচার উপায়
- হাইব্রিড কৈ কি এবং এর গুনাগুন
- কৈ মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আমাদের শেষ কথা
স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভে কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতিঃ ভূমিকা
কৈ মাছ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আগেও জনপ্রিয় ছিল বর্তমানেও অনেক জনপ্রিয় রয়েছে। কারণ এই মাছ অনেক সুস্বাদু। অনেকের পুকুর রয়েছে সেজন্য তারা অনেকেই সেই পুকুরগুলোতে কৈ মাছ চাষ করার চিন্তাভাবনা করে থাকেন। কিন্তু কিভাবে চাষ করবেন এবং স্বল্প ব্যয় কিভাবে অধিক লাভবান হওয়া যায় এই সকল বিষয় তেমন ধারণা নেই।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে বারোমাসি সবজির তালিকা এবং চাষ পদ্ধতি
তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভে কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতি। তাই আপনি যদি সকল বিষয় জানতে চান তাহলে আপনাকে নিচের অংশগুলো মনোযোগ সহকারে ভালোভাবে পড়তে হবে তাহলে আশা করছি আপনি সকল বিষয়ে ভালো একটি ধারণা পেয়ে যাবেন।
কৈ মাছের বর্ণনা
কই মাছ দুই প্রকারের হয়ে থাকে একটি হল বিদেশি কৈ মাছ এবং আরেকটি হল দেশী কৈ মাছ। সবচেয়ে বেশি কৈ মাছ যেটি সুস্বাদু সেটি হল দেশি কৈ মাছ। এই মাছ বাংলাদেশের পশ্চিমবঙ্গের একটি খুবই সুস্বাদু মাছ।
বর্তমানে এই মাছ অনেক দামি হিসেবে পরিচিত। এই মাছগুলো সাধারণত মিষ্টি জলে
বসবাস করে থাকে সেজন্য এই মাছগুলো সাধারণত নদীতে এবং বিলে পাওয়া যায়। তবে
বর্তমানে এই মাছগুলো পুকুরেও চাষ করা হয়ে থাকে।
কৈ মাছের বৈশিষ্ট্য
কৈ মাছের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এই মাস মিষ্টি পানিতে ভালো হয়ে থাকে। এবং এই মাছ পানি ছাড়া ছয় থেকে আট ঘন্টা জীবিত থাকতে পারে। এ মাসটি খেতে অনেক সুস্বাদু পুষ্টিকর এবং কম চর্বিযুক্ত। কৈ মাছের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হলোঃ
-
বেশিরভাগ আবদ্ধ পানিতে দেখা যায় বা থাকতে পছন্দ করে
-
এরা কাদার তলে থাকতে পারে গাছের গুড়ি এবং গর্তের ভিতর থাকতে পারে
-
এরা সাধারণত আগাছাযুক্ত কচুরিপানা যুক্ত পুকুরের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে
-
এরা পানি ছাড়াও অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে সেজন্য এদেরকে জীবিত অবস্থায়
বাজার বাজারজাত করা যায়
-
এগুলো মাছের রোগ বালাই তেমন একটা হয় না
কৈ মাছের খাদ্য তালিকা
কৈ মাছ মূলত ছোট ছোট কীটপতঙ্গ পোকামাকড় ব্যাঙ্গাচি ঝিনুক অথবা মাংস খেয়ে থাকে
তাই আমরা যদি এগুলো খাবার হিসেবে তাদেরকে দিতে পারেন তাহলে খাদ্য খরচ কম হবে এতে
করে আপনি কম টাকায় বেশি লাভবান হতে পারবেন। এছাড়াও কৈ মাছকে খাওয়ানোর
জন্য যেগুলো খাবার দিবেন সেগুলো খাবারের মধ্যে যাতে করে ৩৫ পার্সেন্ট প্রোটিন
থাকে।
কৈ মাছের ভালো গ্রোথের জন্য ভিটামিন ও এনজাইম খাবারের সাথে মিশিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি গ্রোথ বৃদ্ধি করবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য মোট খাবার ১ থেকে ২ কেজি ভিটামিন সি মিশিয়ে দিবেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের টাইগার মুরগির বিশেষ পালন পদ্ধতি
ছোট পোনা পুকুরে ছাড়ার পরে তার দেহ ওজনের ১৬ ভাগ থেকে খাবার দেওয়া আরম্ভ করতে হবে। এই নিয়মে যত বড় হতে থাকবে সেই অনুযায়ী খাদ্য দিতে হবে। আপনি কিনা খাদ্য দিতে পারেন অথবা নিজে তৈরি করে দিতে পারেন।
কৈ মাছের প্রকারভেদ
অনেকে কৈ মাছের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন। বাংলাদেশের মূলত দুই প্রকারের কৈ মাছ হয়ে থাকে একটি হলো আমাদের বাংলাদেশী অর্থাৎ এবং আরেকটি হল থাই কৈ অর্থাৎ বিদেশী কৈ। দেখি কৈ মাছের সাইজ তুলনামূলক ছোট হয়ে থাকে এবং বিদেশী কৈ মাছের সাইজ তুলনামূলক বড় হয়ে থাকে। বিদেশি কৈ মাছ প্রতি চার মাসে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে যেখানে দেশী কৈ মাছ মাত্র ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম হয়ে থাকে।
কৈ মাছের পোনা উৎপাদন করার পদ্ধতি
আপনি যদি কৈ মাছের পোনা উৎপাদন করতে চান তাহলে আপনাকে বেশ কিছু পদ্ধতি অর্থাৎ নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে এগুলো সম্পর্কে যদি না জানেন তাহলে কৈ মাছের পোনা উৎপাদন করতে পারবেন না। আসুন জেনে নেওয়া যাক কৈ মাছের পোনা উৎপাদন করার পদ্ধতি সম্পর্কে।
-
ভালো একটি পুকুর নির্বাচন করুন এবং সেটি প্রস্তুত করুন। পুকুরে কোন আগাছা থাকলে
সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলুন
-
এরপরে মজুদকৃত চার পাঁচ দিনের রেনুপনা অতি শতাংশে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার হারে
মজুদ করা যেতে পারে
-
এরপরে পুকুর প্রস্তুত হয়ে গেলে প্রতি শতাংশে তিনটি করে দিন প্রতিদিন দিবেন
-
৮ থেকে ১০ দিন সকাল এবং বিকালে ৪০% প্রোটিন সমৃদ্ধ নার্সারি খাদ্য দিতে হবে
- ১৩ থেকে ২০ দিন আবার একই নিয়মে ৪০% প্রোটিন সমৃদ্ধ নার্সারি খাদ্য দিতে হবে
-
এবার যেন পোনা ছাড়ার ২০/২৫ দিন পরে যখন যারা পোনাতে রূপান্তরিত হবে তখন
সেগুলো পুকুরে ছাড়ার জন্য উপযুক্ত হবে।
কৈ মাছের রোগ সংক্রান্ত তথ্য এবং বাঁচার উপায়
কৈ মাছের ক্ষত রোগ ছাড়া তেমন একটা রোগ হতে দেখা যায় না। সাধারণত অতিরিক্ত পুকুরে জাল টানার কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে এবং এটা খুব তাড়াতাড়ি বেশি খারাপ আকার ধারণ করে। তাই কৈ মাছের এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য তাড়াতাড়ি সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শতাংশ প্রতি এক কেজি লবণ পানির সাথে মিশিয়ে পুরা
পুকুরে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।এভাবে এক সপ্তাহ পর একই নিয়মে আবারো প্রয়োগ
করতে হবে তাহলে ইনশাআল্লাহ এই রোগ ভালো হয়ে যাবে। এছাড়াও যারা কৈ মাছ চাষ
করে তাদের সাথে পরামর্শ নিতে পারেন তাহলে আরো ভালো ফলাফল পাবেন।
হাইব্রিড কৈ কি এবং এর গুনাগুন
হাইব্রিড কৈ মাছ হল একই প্রজাতির জিনগত দুই বা ততোধিক উৎস হতে আগত বাবা মায়ের জিনের উন্নতি করে থাকে। আর এইভাবে যেই মাছগুলো হয়ে থাকে সেগুলোই হাইব্রিড মাছ। অনেকে এর গুনাগুন সম্পর্কে জানতে চান আসলে হাইব্রিড কৈ মাছের তেমন কোনো গুনাগুন নেই। একটি গবেষণায় দেখা গেছে হাইব্রিড কৈ মাছ মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
এই মাছগুলো খেয়ে মানুষ লিভার কিডনি এবং ক্যান্সারে মারাত্মকভাবে তাড়াতাড়ি আক্রান্ত হচ্ছে। মাছ চাষ করার জন্য বিভিন্ন রকম এন্টিবায়োটি ব্যবহার করা হয় এবং মাছ তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার জন্য হরমোন প্রয়োগ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সম্ভাবনা ও সফলতা
সেগুলো হরমনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োগ করা হয় সেটা হল পিটুইটারি হরমোন
যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই এগুলো মারাত্মক
এন্টিবায়োটিক এবং হরমোনি বৃদ্ধি হওয়া মাছ যদি কোন ব্যক্তি নিয়মিত খায় তাহলে
তাড়াতাড়ি কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে এছাড়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url