রমজান মাসের সকল ফজিলত - রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আলোচনা করব রমজান মাসের সকল ফজিলত এবং রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল সম্পর্কে। রমজান মাসের অনেক ফজিলত রয়েছে এবং অনেক আমল রয়েছে মুসলিম হিসেবে সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।
রমজান মাসের সকল ফজিলত

তাই যারা রমজান মাসের সকল ফজিলত এবং রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল সহ এই সম্পর্কিত আরো বেশ কিছু বিষয়ে জানতে চান তারা আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ রমজান মাসের সকল ফজিলত - রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল 

রমজান মাসের সকল ফজিলত 

বারো মাসে একটি বছর হয়ে থাকি এই ১২ মাসের মধ্যে একটি মাস হলো রমজান মাস এ রমজান মাস আসলে মূলত মানুষের পূর্বের গুনাহ মাফ করার জন্য। পূর্বের সকল গুনাহ মাফের জন্য এই মাসে আমাদের বেশি বেশি এবাদত এবং আমল করার প্রয়োজন। রমজান মাসের অনেক ফজিলত রয়েছে যেগুলো আমাদের মুসলিম আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

রমজান মাসে কয়েকটি ফজিলত সম্পর্কে জেনে রাখুনঃ

১। রমজান মাসে জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়। এটা মুসলমানদের জন্য অনেক বড় একটা ফজিলত।

২। ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত তার মধ্যে একটি হলো সিয়াম এই সিয়াম জান্নাত লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করে দেয়া হবে এই ব্যক্তির সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। 

আরো পড়ুনঃ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে

৩। আমরা জানি জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে তার মধ্যে একটি দরজার নাম হল রাইয়ান। রমজান মাসে রোজা পালনের ফজিলত হলো কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা পালন করে তাহলে সেই ব্যক্তি ছাড়া অর্থাৎ রোজাদার ব্যক্তি ছাড়া রাইয়ান দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

৪। রমজান মাসের আরেকটি বড় ফজিলত হলো এ রমজান মাসে লাইলাতুল কদরের রাত হয়েছে যে রাত বছরের সমস্ত মাসের থেকে উত্তম। সেই রাতে ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তারা মানুষদের উপর শান্তি বর্ষিত করে যায়। 

৫। রমজান মাসের আরেকটি বড় ফজিলত হলো কোন মুমিন বান্দা যদি রোজা রাখে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করে তাহলে মহান আল্লাহ সেই দোয়া সাথে সাথে কবুল করে নেন। এছাড়া পূর্বের কোন গুনাহ থাকবে সেটা মাফ করে দেন। 

রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল

রমজান মাসে অনেক আমল রয়েছে যেগুলো আমল করার মাধ্যমে আমাদের সকল গুনাহ মাফ পাওয়া যায়। এবং অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কয়েকটি আমল সম্পর্কে জেনে নিন। 

রোজা রাখা

রমজান মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হলো রোজা রাখা। ৩০ দিনে ৩০ টা রোজা রাখা প্রয়োজন। কারণ আপনি যখন রোজা রাখবেন তখন আপনি সকল প্রকার খাবার খাওয়া থেকে এবং পানাহার থেকে বিরত থাকবেন আর এই কষ্ট করে সকল প্রকার খাবার খাওয়া থেকে এবং পানাহার থেকে বিরত থাকার জন্য। পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করা হবে। 

সালাত আলাদা করা

সালাত সবসময়ের জন্য আমাদের জন্য ফরজ। কিন্তু রোজার মাসে সালাত আদায় করা একটি শ্রেষ্ঠ আমল তাই রোজার মাসে বেশি বেশি সালাত আদায় করার চেষ্টা করবেন। এবং আশেপাশের মানুষকে সালাত আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবেন। 

কোরআন তেলাওয়াত করা

আমাদের মুসলিম সমাজে একটি কিতাব রয়েছে সেটা হল পবিত্র আল-কোরআন। আপনি যদি রোজা রাখেন শুধুমাত্র এবং কোরআন তেলাওয়াত না করেন তাহলে সেই রোজা পরিপূর্ণ হয় না তাই। রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল হিসেবে কোরআন তেলাওয়াত করা প্রয়োজন। যারা কুরআন তেলাওয়াত করেন তারা কোরআন তেলাওয়াত করবেন আর যারা পারেন না তারা শেখার চেষ্টা করবেন। 

আরো পড়ুনঃ ইসলামের সকল ইতিহাস - ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

দোয়া করা

পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহ সকল রোজাদার ব্যক্তির দোয়া কবুল করে থাকেন তাই সেজন্য রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া করা একটি শ্রেষ্ঠ আমল। রমজান মাসে আপনি যদি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া প্রার্থনা করতে পারেন তাহলে আপনার সকল পাপের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। 

জিকির করা

রমজান মাসে রোজা রাখা সালাত আদায় করা কোরআন তেলাওয়াত করা এবং দোয়া প্রার্থনা করার পাশাপাশি বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করবেন। আপনি যত আল্লাহর জিকির করবেন তত আপনার মন প্রশান্তিতে থাকবে। এবং বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করার কারণে আল্লাহ খুশি হয়ে যাবেন এবং সেই ব্যক্তিকে আল্লাহ প্রশংসিত করবেন। 

রমজান মাসের দোয়া

রমজান মাসের রহমত বরকত এবং নাজাতের মাস। এই মাসে আমাদের আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া প্রার্থনা করা। সব সময় আমাদের দোয়া প্রার্থনা করা প্রয়োজন তবে রমজান মাসের বিশেষ কিছু দোয়া রয়েছে যেগুলো বেশি বেশি পাঠ করার প্রয়োজন সেগুলো দোয়া হলোঃ 

রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া হিসেবে কালিমা শাহাদাত পাঠ করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা। রমজান মাসে অনেক দোয়া রয়েছে সেগুলো পড়তে পারেন তবে বিশেষ ৪ টি দোয়া রয়েছে সেগুলো হলোঃ 

১. أشهد الله إلا الله - আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ 

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া উপযুক্ত ইবাদতের আর কেউ নেই।

২. العوكل جنات - আস আলুকাল জান্নাত

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই

৩. استغفرالله - আস্তাগফিরুল্লাহ 

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাই

৪.  أوجوبيكا مينان نار - আউজু বিকা মিনান নার

অর্থ: আমি তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। 

এই দোয়াগুলো আপনি একত্রে মিলিয়ে করতে পারবেন অথবা এ এটা একটা করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তে পারবেন। অর্থাৎ যেভাবে পড়বেন সেভাবে সওয়াব পাবেন। 

রমজান মাসে আমাদের করণীয়

রমজান মাসে আমাদের করণীয় কি তা হয়তো উপরের অংশগুলো পড়ে ইতিমধ্যে জানতে পেরে গেছেন। তার পরেও যারা বুঝতে পারেনি তাদের জন্য এই অংশ রমজান মাসে আমাদের করণীয় কি এগুলো জানানোর চেষ্টা করছি। 

  • রমজান মাসে রোজা রেখে সকল প্রকার খাবার খাওয়া ও পানাহার থেকে বিরত থাকা।
  • শারীরিক চাহিদা সংযত রাখা
  • আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করা
  • আশেপাশের মানুষের আল্লাহর পথে ডাকা
  • বেশি বেশি দোয়া পাঠ করা
  • বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা
  • সালাত আদায় করা এবং সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ভালো কাজ করা।

আরো পড়ুনঃ ইসলামিক দৃষ্টিতে সহবাস করার প্রকৃত নিয়ম

আপনি যদি একজন মুমিন বান্দা হন এবং রোজা পালন করেন তাহলে রমজান মাসে এই সকল করণীয় কাজ গুলো বেশি বেশি করতে হবে। এছাড়াও রমজান মাসে আরো কিছু উত্তম কাজ রয়েছে চলুন সেগুলো কি কি কাজ জেনে নেওয়া যাক। 

রমজান মাসের উত্তম কাজ সমূহ

রমজান মাস অন্য ১১ টি মাসের থেকে উত্তম। রমজান মাস গুনাহ মাফ পাওয়ার মাস রহমতের মাস। মাগফিরাতের মাস নাজাতের মাস। এই মাসে আমাদের সকল মুসলিম দের কিছু উত্তম কাজ করা প্রয়োজন সেগুলো উত্তম কাজ গুলো হলোঃ

  • সম্পদ অনুযায়ী জাকাত প্রদান করা
  • যাদের ওপর যাকাত ফরজ নয় অর্থ্যাৎ যাদের যাকাত দেওয়ার মতো সম্পদ নাই তাদের জন্য সদকা দেওয়া উত্তম। 
  • প্রতিবেশী বা আত্নীয়দের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখা।
  • রমজান মাসে ওমরা করা একটি উত্তম কাজ।
  • আশাপাশের গরীব অসহায় মানুষের সেহরী বা ইফতার করানো।
  • মসজিদে ইতিকাফ করা একটি উত্তম কাজ।
  • বেশি বেশি দ্বিনের দাওয়াতের কাজ করা।  এবং সমাজের মানুষদের আল্লাহর পথে আহ্বান করা।

রমজান মাসকে ঘিরে আমাদের শেষ কথা

রমজান মাসের সকল ফজিলত এবং রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল সহ রমজান মাস সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে আশা করছি আপনারাই সকল বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। তাই আপনারা রমজান মাসে এই সকল আমল বেশি বেশি করার চেষ্টা করবেন। 

আজকের আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এবং এরকম আরো বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত পোস্ট করা হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখতে পারেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url