পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি - পাঙ্গাস মাছ চাষে আয়

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি অনেকেই জানতে চাই। আমাদের দেশের জনপ্রিয় মাছগুলোর মধ্যে পাঙ্গাস মাছ অন্যতম একটি। মাছ ব্যবসায়ীরা পাঙ্গাস মাছ চাষ করে লাভবান হয় সাধারণত তাই পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি জানার আগ্রহ থাকে অনেকের। আজকের এই আর্টিকেলে পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি

আপনি যদি পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি - পাঙ্গাস মাছ চাষে আয়

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি - পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

আমাদের দেশে যে সকল মাছ বেশি খাওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পাঙ্গাস মাছ। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে পাঙ্গাস মাছ রপ্তানি করা হয়। সাধারণত সেই জন্য মাছ ব্যবসায়ীরা অনেকেই পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি জানতে চেয়ে গুগলে সার্চ করে। কারণ পাঙ্গাস মাছ চাষ করে ভালো লাভবান হওয়া যায়। সাধারণত তাই পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা কিভাবে করবেন এ বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আরো পড়ুনঃ কার্প কী - কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য তালিকা

পাঙ্গাস মাছ চাষের জন্য স্থান নির্বাচনঃ আপনি যদি বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে সঠিকভাবে মাছ চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই পুকুর নির্বাচন করতে হবে দেখে শুনে। তবে যে সকল জলাশয় সহজে শুকানো যায় প্রয়োজনমতো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে উৎপাদন মাছ ও খাদ্য উপকরণ সহজে পুকুর পাড়ে পরিবহন করার মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সাধারণ পুকুর নির্বাচন করতে হবে।

পুকুর প্রস্তুতঃ পাঙ্গাস মাছ চাষ করার জন্য পুকুর অবশ্যই ভালো হবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানোর পর সেখানে ভালোভাবে চুন প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত ১ শতকে এক কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা জরুরী। পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থাকে তাহলে চুন কাদার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পুকুরে যদি ইতিপূর্বেই অধিক ঘনত্বের মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তবে চুনের পাশাপাশি শতকে ৫০ গ্রাম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

পোনা সংগ্রহঃ পুকুর প্রস্তুত করার পরে অবশ্যই পাঙ্গাস মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হবে। আপনি পোনা সংগ্রহ করতে পারেন খুব সহজেই আপনার পরিচিত যেকোনো মৎস্য খামারে গিয়ে আপনি যে সকল মাছ একসাথে চাষ করতে চান অথবা যদি পাঙ্গাস মাছ এককভাবে চাষ করতে চান তাহলে সে মাছের পোনা সংগ্রহ করতে পারবেন।

পাঙ্গাস মাছের খাদ্য তালিকাঃ আপনি যদি মাসের ভালো ফলন পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে মাছ যে পরিমাণ খাবার খেতে পারে ঠিক সে পরিমাণ খাবার প্রতিদিন নির্ধারিত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার পুকুরে থাকা প্রতিটি মাছ যেন খাবার সঠিকভাবে পেতে পারে। এক্ষেত্রে খাদ্য আমিষের ভাগ ৩০% হতে হবে।

পাঙ্গাস মাছের পরিচর্যাঃ আপনি যদি পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার পুকুরের পরিবেশ ভালো রয়েছে কিনা এ বিষয়টি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি পানি খুবই খারাপ হয়ে যায় তাহলে আপনাকে আংশিক ভাবে পানি পরিবর্তন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি প্রতি ১৫ দিন অন্তর শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুল ও খাদ্য লবণ প্রয়োগ করতে হবে।

পুকুরের তলদেশে যেন অতিরিক্ত কাদা না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। পানিতে সঠিকভাবে অক্সিজেনের মাত্রা রয়েছে কিনা এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। পুকুরের সার্বিক পরিবেশ ভালো রাখার জন্য কোন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু অথবা জীবজন্তু জানো প্রবেশ করতে পারে এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। পুকুরে পানি যেন ভালো থাকে সেটি ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। আশা করি পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন।

পাঙ্গাস মাছ চাষে আয়

অনেক মাছ ব্যবসায়ী রয়েছে যারা প্রথমবারের মতো পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে চাই। সাধারণত তারা গুগলে সার্চ করে পাঙ্গাস মাছ চাষে আয় সম্পর্কে জানতে চাই। এখন আপনি যদি পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কোন ধরনের ধারণা না রাখেন তাহলে ওই বিষয়টি জানার পরে অবশ্যই পাঙ্গাস মাছ চাষ করার আগে পাঙ্গাস মাছ চাষে আয় সম্পর্কে জেনে নেবেন।

আপনি যদি পাঙ্গাস মাছ চাষ করে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে পাঙ্গাস মাছ কিভাবে চাষ করতে হয় অর্থাৎ পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। কারণ অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কোটিপতি হচ্ছে। এমন ব্যবসায় রয়েছে যিনি ৬০ একর জমিতে তার ২০ টি পুকুরে চাষ করেন পাঙ্গাস মাছ।

আরো পড়ুনঃ তরমুজ চাষ পদ্ধতি - টবে তরমুজ চাষ পদ্ধতি

এই ব্যবসায়ী প্রতিবছর শুধু পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে ইনকাম করেন ২০ কোটি টাকার বেশি। এমন অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা প্রতিবছর পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে ভালো পরিমানে অর্ধ উপার্জন করে থাকেন। এখন আপনি যদি সে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন হতে চান তাহলে আপনাকে সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে হবে।

পাঙ্গাস মাছের বৈশিষ্ট্য

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা পাঙ্গাস মাছ চিনেনা। পাঙ্গাস মাছের বৈশিষ্ট্য জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই পাঙ্গাস মাছ চিনতে পারি। যেহেতু আজকের এই আর্টিকেলে পাঙ্গাস মাছ নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে তাই পাঙ্গাস মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী।

পাঙ্গাস মাছের মাথাটি মুখের কোণের পিছনে তার দৈর্ঘ্যের সমান বিস্তৃত থাকে। এই মাছের তুন্ড প্রায় গোলাকার হয়ে যাবে। চোখ সরু চর্বি গঠিত পাতাযুক্ত এবং আংশিকভাবে মুখের কোণের নিচের স্তরে অবস্থিত। বক্ষকাটা পৃষ্ঠকাটার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে যা সম্মুখে ধারালো কিন্তু পশ্চাতে ছোট দাঁতযুক্ত থাকে।

পাঙ্গাস মাছের দেহে কোনো আঁশ নেই। চর্বিযুক্ত পাখনা ছোট। দেশি পাঙ্গাশ রুপালি রঙের পিঠের দিকটা কালচে এবং সামান্য ধূসর হয়ে থাকে। সাধারণত উপরের বৈশিষ্ট্য গুলো দেখে আপনি পাঙ্গাস মাছ খুব সহজেই চিনে নিতে পারবেন। বিশেষ করে আমাদের দেশি পাঙ্গাস মাছের বৈশিষ্ট্য এগুলো।

যেভাবে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করবেন

যে সকল সফল ব্যবসায়ী রয়েছে সাধারণত তারা পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেই সফল হয়েছেন। এখন আপনি যেভাবে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করবেন? সে পদ্ধতিটি জেনে থাকা লাগবে। বাজারে পাঙ্গাস মাছের চাহিদা রয়েছে অনেক সাধারণত তাই পাঙ্গাস মাছ চাষ করে চাষিরা লাভবান হয়। যেভাবে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করবেন? বিস্তারিত জেনে নিন।

পুকুর প্রস্তুত করতে হবেঃ আপনি যদি পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে চান তাহলে আপনার পুকুর কোথায় হবে সেই স্থানটি প্রথমে নির্বাচন করতে হবে। এরপরে আপনাকে ভালোভাবে পুকুর তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থাকে তাহলে অবশ্যই চুনকাদার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পুকুরে যদি আগে কখনো অধিক ঘনত্বের মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে চুনের পাশাপাশি বেশ কিছু সার প্রয়োগ করতে হবে।

পোনা মজুদ করতে হবেঃ আপনি যদি পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে পাঙ্গাস মাছের পোনা মজুদ করতে হবে। আপনি যদি চান পাঙ্গাস মাছ মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করবেন তাহলে পাঙ্গাস মাছের সাথে অন্যান্য মাছের পোনাগুলো সংগ্রহ করতে হবে। মাছ চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে ভালোভাবে উপযুক্ত আকারের পোনা এর ওপর।

মাছের রোগ দমনঃ পাঙ্গাস মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ। সাধারণত বেশ কিছু রোগ রয়েছে যেগুলো পাঙ্গাস মাছের হতে পারে। পাঙ্গাস মাছ লালচে দাগ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত এই রোগ হলে ত্বক ও পায়খানার গোড়ায় লালচে দাগ স্পট দেখা যায় এবং অনেক সময় মুখে ঘা হতে পারে।

শীতকালে পরিণত পরিমাণে ডিপ টিউবলের পানি পুকুরে সরবরাহ করলে পাঙ্গাস মাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই সময় মাছের প্রতি বেশি যত্নবান হতে হবে। এছাড়া লালচে দাগ বা লেজ ও পাখনা পাচার রোগ পাঙ্গাস মাছকে আক্রান্ত করতে পারে। আরো বেশ কিছু রোগ রয়েছে যেগুলো পাঙ্গাস মাছ কে আক্রান্ত করে।

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি - পাঙ্গাস মাছ চাষে আয়ঃ শেষ কথা

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি, পাঙ্গাস মাছ চাষে আয়, পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা, যেভাবে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করবেন? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি পাঙ্গাস মাছ চাষ করে লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নেবেন।

আরো পড়ুনঃ আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি - ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url