কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা যারা জানতে চান কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে আজকের পোস্টটি তাদের জন্য। এই পোস্টে বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করবো কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে। তাহলে চলুন এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক। 

কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ

কিসমিসের প্রকারভেদ কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ সহ এই সম্পর্কিত আরো বেশ কিছু বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

পোস্ট সূচিপত্র ঃ কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ 

কিসমিসের প্রকারভেদ

অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন কিসমিসের প্রকারভেদ বা কিসমিস কত প্রকারের হয়ে থাকে। আমরা অনেকে কিসমিস খেতে পছন্দ করি কিন্তু কত প্রকারের কিসমিস রয়েছে তা জানি না। কিসমিসের প্রকারভেদ মূলত তিন প্রকার হয়ে থাকে এই তিন প্রকারের কিসমিস তিন রকম হয়ে থাকে। তিন প্রকারের কিসমিস গুলো হলোঃ

১। সুলতানা কিসমিস

সুলতান নামক এক প্রকার আঙ্গুর রয়েছে এই আঙ্গুর যখন শুকিয়ে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শুকানো হয় এবং শুকানোর আগে এক প্রকার তৈলাক্ত দ্রবণের মধ্যে ভিজিয়ে রাখা হয়। এবং সবশেষে সকল প্রক্রিয়া শেষ করার পরে যখন সেখান থেকে কিসমিস তৈরি করা হয় সেটাকে সুলতানা কিসমিস বলা হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুনঃ কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

২। বাদামী কিসমিস

বাদামী কিসমিস যেটা আমরা সচরাচর খেয়ে থাকি। এটা একপ্রকার আঙ্গুর থেকে তিন সপ্তাহ সময় নিয়ে শুকিয়ে যখন তৈরি করা হয় তখন সেটা দেখতে কিছুটা বাদামি রঙের হয়ে থাকে আর এটাকেই বলা হয় বাদামি কিসমিস। যা খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। 

৩। বেদানা কিসমিস

বেদানা কিসমিস যেটা কালো আঙ্গুর থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। এক ধরনের কালো আঙ্গুর রয়েছে সেটা তিন সপ্তাহ রোদে শুকিয়ে যখন কিসমিস তৈরি করা হয় তখন সেটাকে বেদানা কিসমিস বলা হয়। এই কিসমিস খেতে কিছুটা টক এবং মিষ্টি তবে বেদানা কিসমিস আকারে ছোট হয়ে থাকে এবং খেতে অনেক সুস্বাদু। 

কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ

কিসমিস আমাদের জন্য এত উপকারী হওয়ার কারণ হলো কিসমিসের মধ্যে অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে কিসমিসের মধ্যে যেগুলো পুষ্টি গুণ রয়েছে সেগুলো হলোঃ 

  • ফাইবার
  • থায়ামিন
  • সেলেনিয়াম
  • রিবোফ্লাভিন 
  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • লৌহ
  • ফসফরাস 
  • জিংক
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • পটাশিয়াম 
  • সোডিয়াম 
  • প্রোটিন
  • শর্করা
  • চিনি
  • জল
  • ভিটামিন সি
  • ভিটামিন বি ৬
  • ভিটামিন ই 
  • ফোলেট
  • ভিটামিন কে
  • স্যাচুরেটেড

এগুলো ছাড়া আরো অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে কিসমিসের মধ্যে তাই এগুলো পুষ্টি পেতে কিসমিস খেতে পারেন। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে। কিসমিসের উপকারিতা গুলো হলোঃ 

১. রক্তস্বল্পতা দূর করে

যাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দিবে বা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারী। আপনি যদি নিয়মিত কিসমিস খান তাহলে রক্ত বৃদ্ধি পাবে এবং রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যাবে। তাই রক্তস্বল্পতা দূর করতে নিয়মিত পরিমান মত কিসমিস খেতে পারেন। 

২. হার্ট ভালো রাখে

যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারী একটি উপাদান। হার্টের সমস্যা অনেক মারাত্মক যার ফলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি আগে থেকে হার্টের যত্ন নিতে পারেন তাহলে হার্ট ভালো থাকবে। এই হার্ট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত পরিমাণমতো কিসমিস খেতে পারেন।

৩. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে

কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক উপকারী। আপনার যদি হাই ব্লাড প্রেসার থাকে তাহলে সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন পরিমাণ মতো কিসমিস খেতে পারেন তাহলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইনশাআল্লাহ। 

আরো পড়ুনঃ এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

যাদের খাবার খাওয়ার পরে হজম হতে চায় না এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের জন্য কিসমিস হতে পারে অনেক উপকারী একটি উপাদান। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিয়মিত পরিমাণমতো কিসমিস খাবেন দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে গেছে। তবে পরিমাণ এর চেয়ে বেশি খাওয়া যাবে না তাহলে উপকারের চেয়ে অপকারিতা বেশি হবে। 

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

কিসমিসের রোগ মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম এছাড়া আরো অনেক পুষ্টি উপাদান। ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করে থাকেন তাদের জন্য ডায়েটের খাবারে কিসমিস রাখা প্রয়োজন। ডায়েটের খাবারে যদি কিসমিস রাখেন এবং পরিমাণ মতো করে কিসমিস খান তাহলে এটা আপনার ওজন কমাতে ভালো কাজ করবে। 

৬. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে

কিসমিসের মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট তাই আপনি যদি নিয়মিত পরিমাণমতো কিসমিস খান তাহলে এটা আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক ভালো কাজ করবে। তাই শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন কয়েকটি করে কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন দেখবেন শরীরের শক্তি অনেকটা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি যেকোনো কাজ করতে পারবেন ভালোভাবে। 

৭. সেক্সের জন্য উপকারী 

যাদের সেক্স পাওয়ার কম তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারী। কারণ কিসমিসের মধ্যে রয়েছে বোরণ নামক খনিজ উপাদান যা নারী ও পুরুষ উভয়েরই সেক্স বৃদ্ধি করে। তাই আপনার যদি এই সমস্যা থাকে তাহলে কিসমিস খেতে পারেন। সমস্যা না থাকলেও খেতে পারেন ভালো উপকারীতা পাবেন। 

৮. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য কিসমিস অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। আপনি যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কয়েকটা কিসমিস পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে পারেন এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে সেগুলো পানি সহকারে কিসমিস গুলো খেতে পারেন তাহলে এটা আপনার হজম শক্তি অনেকটা বৃদ্ধি করবে। 

৯. চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়

অ যাদের অল্প বয়সে বিভিন্ন কারণ চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে গেছে তাদের জন্য কিসমিস খাওয়া অনেক উপকারী। কারণ কিসমিসের মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই আপনি যদি কিসমিস খেতে পারেন তাহলে আপনার এই পুষ্টিগুণগুলো বৃদ্ধি পাবে এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে। 

১০. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ আপনি যদি ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে চান অথবা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে যান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে তার মধ্যে একটি হলো কিসমিস খাওয়া। আপনি যদি প্রতিদিন এর খাবার তালিকায় পরিমাণমতো কিসমিস রাখতে পারেন এবং খেতে পারেন তাহলে এটা আপনার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে অনেক ভালো কাজ করবে। 

সঠিকভাবে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম - কিভাবে কিসমিস খেলে উপকার হবে

ভালো উপকারিতা পাওয়ার জন্য সঠিকভাবে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম জানা প্রয়োজন। আসলে কিসমিস খাবার তেমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই আপনি যেভাবেই খেতে পারবেন সেভাবেই উপকারিতা পাবেন। তবে আপনি যদি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সহকারে খেতে পারেন তাহলে ভালো উপকারিতা পাবেন। এছাড়াও মধুর মধ্যে কিসমিস দিয়ে যদি খেতে পারেন তাহলেও ভালো উপকারিতা পাবেন। 

আরো পড়ুনঃ মেথি ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা - মেথি ভেজানো পানি খাওয়ার অপকারিতা

যে কোন মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে কিসমিস দিয়ে খেতে পারেন এটাও অনেক উপকার। আর প্রতিদিন যদি কিসমিস খান তাহলে পাঁচটি থেকে ছয়টি খাওয়ার চেষ্টা করবেন এর থেকে অতিরিক্ত বেশি খাবেন না তাহলে উপকারের জায়গায় ক্ষতি বেশি হবে ক্ষতি না হলেও ভালো উপকারিতা পাবেন না।তাই এগুলো নিয়ম মেনে কিসমিস খাওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে ভালো উপকারিতা পাবেন ইনশাআল্লাহ। 

দিনে কতগুলো কিসমিস খাওয়া প্রয়োজন

কিসমিসের মধ্যে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে তাই আপনি যদি এটা অতিরিক্ত বেশি খান তাহলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মতো নিয়মিত কিসমিস খাওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাবার প্রয়োজন। যদি এর বেশি খান তাহলে ভালো উপকারিতা পাবেন না। তাই প্রতিদিন যদি কিসমিস খেতে চান তাহলে এই পরিমাণ কিসমিস খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

আমাদের শেষ কথা

আশা করছি আজকের পোস্টটি পড়ে আপনারা কিসমিস খাবার বিশেষ উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ সহ এই সম্পর্কিত বেশে কিছু বিষয়ে জানতে পেরেছেন। তাই আমাদের পোস্টটি কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিবেন। আর এরকম আরো বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করবেন ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url