একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দাফনের পূর্বে করণীয়

আসসালামু আলাইকুম একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি এই বিষয়ে যদি আপনি জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। একজন মুসলিম মুমিন বান্দা মৃত্যুর পরে তার দাফনের আগে কিছু পূর্বশত রয়েছে সেগুলো মানার প্রয়োজন পড়ে। তাই চলুন ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দাফনের পূর্বে করণীয় কি এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি

আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি এবং ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দাফনের পূর্বে করণীয় কি এই সকল বিষয়ে। তাই আপনি যদি সকল বিষয়ে জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃ একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দাফনের পূর্বে করণীয়

ভূমিকা

একজন মুসলিম মৃত্যুবরণ করার পরে পাঁচটি কাজ রয়েছে সেগুলো দ্রুত সম্পাদন করতে হয় এবং এভাবে একজন মুসলিমকে দাফন করা হয়ে থাকে। তাই আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি কি? আপনি যদি এই সকল বিষয়ে জানতে চান তাহলে নিচের অংশগুলো মনোযোগ সহকারে ভালোভাবে পড়ুন তাহলে আশা করছি এ সকল বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেল এর মূল বিষয়টি শুরু করা যাক। 

একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি - ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দাফনের পূর্বে করণীয়

একজন মুসলিম মৃত্যুবরণ করার পরে কিছু করণীয় কাজ রয়েছে এগুলো করার পরে তাকে দাফন করা হয়ে থাকে। এইগুলো শর্তের মধ্যে কোন একটা যদি পালন না করেন তাহলে সেই দাফন সঠিকভাবে হয় না। তাই জেনে রাখুন একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি কি? 

গোসল

একজন মুসলিম মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তার দাফনের আগে সেই মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর প্রয়োজন হয়। এটা দাফনের পূর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান বা প্রথম শর্ত। যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে তার জন্য দুটি সওয়াব রয়েছে। একটি হলো কেউ যদি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল করায় তার জন্য রয়েছে সওয়াব। 

আরো পড়ুনঃ সূরা আল আরাফ এর সম্পূর্ণ ২০৬ টি আয়াত

আর কেউ যদি গোসল করে না সময় মৃত ব্যক্তির কোন অপছন্দনীয় কোনো বিষয় গোপন রাখে তাহলে তার জন্য রয়েছে সওয়াব। কেউ যদি কোন মৃত ব্যক্তির গোসল করানোর সময় তার অপছন্দনীয় বিষয় গোপন রাখে তাহলে আল্লাহ সেই গোসল করানো ব্যক্তিকে ৪০ বার ক্ষমা করে দেন। 

আর যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে দাফন করানোর জন্য কবর খনন করবে এবং সেই কবরের মধ্যে দাফন করবে আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কৃত করতে থাকবেন। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার জন্য দ্রুত গোসল করানোর ব্যবস্থা করা সুন্নত। তাই আপনার আশেপাশে যদি কোন মুসলিম মুমিন বান্দা মৃত্যু বরণ করে তাহলে প্রথম পূর্ব শর্ত হলো তাকে তাড়াতাড়ি গোসল করাতে হবে।

কাফন পরিধান

একজন মুসলিম মুমিন বান্দা মৃত্যু বরণ করার পরে দাফন করার পূর্বে আরেকটি পূর্ব শর্ত কাজ হল কাফন পরিধান করানো। কোন মুসলিম-বান্দা যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তাকে গোসল করাতে হবে প্রথমে তারপরে কাফনের কাপড় পরিধান করাতে হবে। কাফন পরিধান করানোর জন্য সাদা সুতির কাপড় প্রয়োজন হয়ে থাকে তাই সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। 

অথবা তার ব্যবহৃত যদি কোন সাদা কাপড় থাকে তাহলে সেটাও ব্যবহার করা যাবে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য তিনটি করে কাপড়ের প্রয়োজন হয়। তারপরে ভালোভাবে কাফনের কাপড় পরিধান করানোর পরে তিনবার সুগন্ধি ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে মুহরিম এর কাফনের কাপড়ে কোন সুগন্ধি ছিটানো যাবে না। এভাবেই কাফন পরিধান সম্পন্ন করতে হবে। এখানে আমরা দুটি শর্ত আলোচনা করলাম নিচে চলুন আরো তিনটি শর্ত জেনে নেওয়া যাক। 

একজন মুমিনকে দাফন করার আগে আমল করা লাগে

একজন মুসলিমের মৃত্যুবরণের পরে পাঁচটি শর্ত পালন করা হয় তার মধ্যে আমরা দুটি সম্পর্কিত মধ্যে জানতে পেরেছি। এবার এই অংশ জানবো একজন মুসলিম মৃত্যুবরণ করলে কোন আমলগুলো করা লাগে এবং তারপরে দাফন সম্পন্ন করতে হয়।

জানাযার নামাজ

একজন মুসলিম যখন মৃত্যুবরণ করবে তখন তাকে গোসল করানো এবং কাফনের কাপড় পরানোর জানাজার জন্য যে শর্ত রয়েছে সেটা পূরণ করতে হয়। আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশিরভাগ জানাজা মসজিদের বাহিরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে পড়াতেন। 

তবে মসজিদের বাইরে যদি কোন রকম জায়গা না থাকে তাহলে মসজিদে পড়ানো জায়েজ রয়েছে। এই জানাজার নামাজে মহিলারাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন তবে তাদেরকে পর্দার আড়ালে দাঁড়াতে হবে।আর কোন ব্যক্তির মৃতদেহ যদি গলে পচে যায় এবং দুর্গন্ধ বের হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে দাফন করানোর পরে তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জানাজার নামাজ আদায় করা যাবে। 

জানাযা বহন

জানাজার নামাজ শেষ হওয়ার পরে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের জন্য সেই ব্যক্তির লাশ একটি খাটিয়াতে করে বহন করতে হবে। এবং সেই খাটিয়াটি চারজনে ধরতে পারবে। আর জানাজা বহন করার সময় অবশ্যই কাঁধে রাখতে হবে কারণ এটা সুন্নত। আর যারা জানাযা বহন করবে তাদের মুখ সামনের দিকে রাখতে হবে। 

আর এই দায়িত্ব কেবলমাত্র পুরুষদের জন্য মেয়েরা কখনোই দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। আর মেয়েরা জানাজা বহন করার সময় সেটার পেছনে পেছনে যেতে পারবেনা। এবং এই সময় জোরে জোরে কান্নাকাটি করা যাবে না আর কোনরকম ধুপ ধোয়া দেওয়া যাবেনা। 

আরো পড়ুনঃ সূরা আল নিসা এর সম্পূর্ণ ১৭৬ টি আয়াত

এবং যারা পিছনে পিছনে থাকবে তারা কোন কথা না বলে চুপচাপ মৃত্যুর কথা চিন্তা করতে করতে হেঁটে হেঁটে যেতে হবে।আর যারা জানাজার মাইয়াতের পিছনে পিছনে যাবে তাদের ওযু করা মুস্তাহাব। তবে এটা একেবারে আবশ্যিক নয়। তাই কোন মুমিনের মৃত্যুবরণ করার পরে এই শর্তটি ভালোভাবে পালন করতে হবে। 

দাফন

একজন মুসলিম মুমিন বান্দা যখন মৃত্যুবরণ করবে তখন উপরের সব আমলগুলো পালন করার পরে সর্বশেষ তাকে দাফন করতে হবে। এবং একজন মুসলিম বান্দাকে মুসলিম গোরস্থানে বা কবরস্থানে দাফন করতে হবে। কোন ইহুদী নাসারা বা কাফেরদের সাথে পাশে কোন মুসলিম বান্দাকে দাফন করানো যাবে না। এবং যারা আল্লাহর সাথে শরিক করে এবং বিদআত এ লিপ্ত থাকে তাদের কবরের পাশেও কোন মুমিন মুসলিম বান্দাকে দাফন করানো যাবে না। 

কবরকে উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে লম্বালম্বি করতে হবে। মাইয়াতকে দাফন করানোর জন্য পুরুষ মানুষ এর প্রয়োজন যারা মাইয়াতের অতি আপন কাছের মানুষ আর যদি এমন মানুষ না থাকে তাহলে যেকোনো আলেম দাফন করাতে পারবে। তবে সেই ব্যক্তি যদি পূর্ব রাতে স্ত্রী সহবাস করে তাহলে সেই ব্যক্তি দাফন করাতে পারবে না। আর মাইয়াতকে কবরে শুয়ানোর সময় এই দোয়াটি পাঠ করতে হবে। 

বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতে রাসুলিল্লা। তারপরে কবরে তিন মুষ্টি করে মাটি দিতে হবে এবং এই দোয়াটি পাঠ করতে হবে। মিনহা খালাক্বনা কুম ওয়া ফীহা নুঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা রাতান উখরা। এভাবে মাটি দিয়ে দাফন সম্পন্ন করার পরে দোয়া পাঠ করতে হবে আর এভাবেই সকল শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে একজন মুমিনের দাফন সম্পন্ন করা হবে। 

মৃত্যুর পর যে সব আমল সারা জীবন কাজে লাগে তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা

মৃত্যুর পরে আপনার জীবিত অবস্থায় করে যাওয়া কিছু আমল কাজে লাগে। তাই আমাদের সবাইকে এই আমল গুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন এবং এই আমলগুলো বেশি বেশি করা প্রয়োজন। মৃত্যুর আগেই যেগুলো আমল আপনি করলে মৃত্যুর পরে সেগুলো আপনার কাজে লাগবে সেই আমলগুলো হলোঃ 

অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা বা ঘর দান করা, নেক সন্তান দুনিয়ায় রেখে যাওয়া, মসজিদ নির্মাণ করা, ইলম শিক্ষা দেওয়া, প্রবাহিত পানির সঠিক ব্যবস্থা করা, খাবার পানির ব্যবস্থা করা, মানুষের কল্যাণের জন্য কিতাব রচনা করা, আল্লাহর পথে সকল মুসলমানকে দাওয়াত দেওয়া, বৃক্ষরোপণ করা, কোরানুল কারীম বিতরণ করা। 

আরো পড়ুনঃ সূরা আল বাকারা এর সম্পূর্ণ ২৮৬ টি আয়াত

এছাড়াও আর ও অনেক আমল রয়েছে যেগুলো আপনি দুনিয়ার জীবনে যদি করে যেতে পারেন তাহলে মৃত্যুর পরে সেগুলোর আমল পেতেই থাকবেন। তাই আমরা দুনিয়ার জীবনে এই সকল আমল বেশি বেশি করার চেষ্টা করবে এবং সবাইকে এই সকল আমল করার জন্য তাগিদ দেবো। 

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা একজন মুমিনের মৃত্যুর পর দাফনের পূর্ব শর্তগুলো কি এবং ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দাফনের পূর্বে করণীয় কি এ সকল বিষয়ে সঠিকভাবে একটি ধারণা পেয়ে গেলেন বা জানতে পারলেন। 

আপনাদের যদি আজকের আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।এবং পরবর্তীতে অন্য কোন বিষয়ে যদি জানতে চান সেটাও কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন। তাহলে আমরা আপনাদের সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানানোর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url