সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ জেনে রাখা উচিত। কারণ মুসলিমদের চলার প্রতিটি পথেই দোয়া রয়েছে। আপনি যদি সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ জেনে রাখতে পারেন তাহলে খুব সহজে এগুলো আপনার জীবনে কাজে লাগবে। আপনাদের সুবিধার্থে এই আর্টিকেলে সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ

আপনি যদি সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ

রাব্বি জিদনি ইলমা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। কারণ আমরা প্রতিদিন যে সকল কাজ করে থাকি সব কাজের একটি নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। এই দোয়াগুলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আমল করে গিয়েছেন এবং আমাদেরকে আমল করতে বলেছেন। আমরা যদি সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ জেনে রাখতে পারি তাহলে খুব সহজেই আল্লাহতালার সন্তুষ্ট অর্জন করতে পারব।

আরো পড়ুনঃ  ফি আমানিল্লাহ বলতে কি বুঝায় - কেউ ফি আমানিল্লাহ বললে উত্তরে কি বলা লাগে

আমরা প্রতিদিন যে সকল দোয়া ব্যবহার করি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাব্বি জিদনি ইলমা। কিন্তু আমরা অনেকেই রাব্বি জিদনি ইলমা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সম্পর্কে জানিনা। আমরা ছোটতে অবশ্যই এই কথাটি শুনে থাকবো যে স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর জন্য রাব্বি জিদনি ইলমা এই দোয়াটি পড়তে হয়। ছোটবেলায় পড়াশোনা শুরু করার আগে আমাদের মা-বাবারা আমাদেরকে এই দোয়াটি পড়াতেন।

অথবা কোরআন শরীফ পড়া শুরু করার আগে আমাদেরকে এই দোয়া পড়তে বলা হয়। সাধারণত কোরআন শরীফ পড়ার আগে রাব্বি জিদনি ইলমা পড়া সুন্নত নয়। যারা কোরআন তেলাওয়াত করার আগে এটিকে পড়া নিয়ম মনে করে সাধারণত তারা সম্পূর্ণ ভুল। নিচে রাব্বি জিদনি ইলমা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ উল্লেখ করা হলো।

আরবিঃ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বি জিদনি ইলমা।

বাংলা অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।

আপনি যদি আপনার স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে চান তাহলে উপরের দোয়াতে নিয়মিত পড়তে থাকুন। এছাড়া স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করুন। যেমনঃ সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর জিকির করুন। {সুরা কাহাফঃ ২৪}

কালেমা তাইয়্যেবা উচ্চারন ও অর্থ

আপনি যদি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি কালেমা তাইয়্যবা জানেন। কারণ একজন মুসলিম আর কালেমা তাইয়্যেবার সাথে পরিচিত নয় এরকমটা হতে পারে না। মুসলিম হতে হলে প্রথম যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল কালেমা জানা এবং বিশ্বাস করা। যারা নতুন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে সাধারণত তারা অনেকেই কালেমা তাইয়্যেবা উচ্চারন ও অর্থ সম্পর্কে জানেনা।

 بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ -- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আরবিঃ لَا اِلَهَ اِلاَّ اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْ لُ الله

বাংলা উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ

বাংলা অর্থঃ আল্লাহ ব্যাতিত কোন মাবুদ বা এলাহ নেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। 

কালেমা তাইয়্যেবা পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে কালেমা তাইয়্যেবা প্রতিদিন পড়তে হবে। আপনি যদি এটিকে জিকিরে পরিণত করে নিতে পারেন তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনার উপর খুশি হবে। কারণ এখানে আল্লাহ তায়ালা একত্ববাদের প্রকাশ করা হয় এবং এটি হলো মুসলিম হওয়ার প্রথম শর্ত।

কালেমা শাহাদাত উচ্চারন ও অর্থ

প্রতিটি মুসলিমকে কালেমা তাইয়্যেবা যেমন জানতে হয় ঠিক তেমন কালেমা শাহাদাত উচ্চারন ও অর্থ সম্পর্কেও ধারণা নিতে হয়। ইসলামে যে কয়টি কালেমা রয়েছে সবগুলোই একজন মুসলিমের জন্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী। আপনি যদি কালেমা শাহাদাত উচ্চারন ও অর্থ না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।

কালিমা শাহাদাত আরবিঃ اشْهَدُ انْ لّآ اِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً اعَبْدُهوَرَسُولُه

বাংলা উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

বাংলা অর্থঃ আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক। তাঁহার কোন অংশীদার নেই, এবং আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহ প্রেরিত বান্দা ও রাসূল।

কালেমা তামজিদ উচ্চারন ও অর্থ

যে পাঁচটি কালেমা একজন মুসলিমের জানা উচিত সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কালেমা তামজিদ। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমরা সকলেই কালেমা তাইয়্যবা এবং কালেমায়ে শাহাদাত জানি কিন্তু কালেমা তামজিদ উচ্চারন ও অর্থ সম্পর্কে তেমন কেউ জানে না। তাহলে চলুন কালেমা তামজিদ উচ্চারন ও অর্থ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কালিমা তামজিদ আরবিঃ سُبْحَان لِلّه وَ الْحَمْدُ لِلّهِ وَ لآ اِلهَ اِلّا اللّهُ، وَ اللّهُ اَكْبَرُ وَلا حَوْلَ وَلاَ قُوَّة ِلَّا بِاللّهِ الْعَلِىّ الْعَظِيْم

বাংলা উচ্চারণঃ সুব্হানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আক্বার ওয়ালা হাওলা ক্বুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল্ আলিইল্ আযীম্।

বাংলা অর্থঃ মহিমা ও সকল প্রসংশা আল্লাহ্র জন্য, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, সর্বশক্তিমান ও সর্বক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ নয়। তিনিই মহান।

কালেমা তাওহীদ উচ্চারন ও অর্থ

পাঁচটি কালেমার মধ্যে চতুর্থ কালেমা হল কালেমা তাওহীদ। আমরা যেহেতু মুসলিম সে হলো আমাদেরকে সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। একজন মুসলিম হতে হলে আমাদেরকে প্রথম পাঁচটি কালেমা সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মুসলিম রয়েছে যারা সবগুলো কালেমা জানেনা।

যে কালেমা গুলো আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি অথবা পড়ে থাকি প্রথম দুইটি সম্পর্কে সবার ধারণা রয়েছে কিন্তু কালেমা তাওহীদ উচ্চারন ও অর্থ কারো তেমনভাবে জানা নেই। নিচে কালেমা তাওহীদ উচ্চারন ও অর্থ বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

কালিমা তাওহীদ আরবিঃ لا الهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيْكَ لَهْ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْى وَ يُمِيْتُ وَ هُوَحَىُّ لَّا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدًا ط ذُو الْجَلَالِ وَ الْاِكْرَامِ ط بِيَدِهِ الْخَيْرُ ط وَهُوَ عَلى كُلِّ شَئ ٍ قَدِيْرٌ ط

বাংলা উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্ দাহু লা-সারিকা লা-হু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহা ই ওয়া উ মিতু বি ইয়া সি হিল খাইরু ওয়া-হু-ওয়া আ-লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

বাংলা অর্থঃ আল্লাহ এক আর কোন মাবুদ নেই তিনি এক তার কোন অংশীদার নেই। সমস্ত সৃষ্টি জগৎ এবং সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনি জীবন হান করেন আবার তিনিই মৃত্যুর কারণ তার হাতেই সব ভাল কিছু এবং তিনিই সৃষ্টির সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

দোয়া কুনুত উচ্চারন ও অর্থ

আমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি আল্লাহ তা'আলা কে সন্তুষ্ট করার জন্য। কারণ এটি হলো আমাদের ইবাদত। নামাজ আদায় করার জন্য বিভিন্ন সময় আমাদের বিভিন্ন দোয়া পড়তে হয়। ঠিক যেমন বেতের নামাজ পড়ার সময় যখন অতিরিক্ত একটি তাকবীর দিয়ে থাকে সাধারণত তখন আমরা দোয়া কুনুত পড়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই দোয়া কুনুত উচ্চারন ও অর্থ সম্পর্কে জানে না।

আপনি যদি দোয়া কুনুত না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেল থেকে দোয়া কুনুত উচ্চারন ও অর্থ জানার মাধ্যমে খুব সহজেই মুখস্ত করে নিতে পারবেন। যেহেতু এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া তাই আমাদেরকে দোয়া কুনুত উচ্চারন ও অর্থ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।

দোয়া কুনুত আরবিঃ اَللَّهُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাসকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক্।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

দোয়া মাসুরা উচ্চারণ ও অর্থ

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ভুল করে থাকি। এমন কিছু ভুল করে থাকি যেগুলো শুধু আল্লাহতায়ালা দেখে দুনিয়ার কোন মানুষ দেখে না। সাধারণত এই ভুলগুলোর জন্য আমরা আল্লাহতালার কাছে দোয়া করি। কিন্তু অনেকেই আল্লাহতালার কাছে কিভাবে দোয়া করবে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানে না। দোয়া মাসুরা মূলত ক্ষমা প্রার্থনা করার দোয়া।

কিন্তু আপনি যদি দোয়া মাসুরা উচ্চারণ ও অর্থ না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেল থেকে মুখস্ত করে নিন। কারণ যখন আপনি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া প্রার্থনা করবেন তখন এই দোয়াটি পড়বেন। দোয়া মাসুরা উচ্চারণ ও অর্থ নিচে উল্লেখ করা হলো।

আরবিঃ اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা। ওয়ালা ইয়াগ ফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লি, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাকারী, করুণাময়। {সহিহ বুখারিঃ ৮৩৪, সহিহ মুসলিমঃ ২৭০৫}

ইমানে মুজমাল উচ্চারণ ও অর্থ

ইমানে মুজমাল অর্থ হল ঈমান অথবা বিশ্বাস স্থাপন করা। আমরা ইতিমধ্যেই সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা ইমানে মুজমাল উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখেনা। আল্লাহতালার একত্ববাদ প্রকাশ করার জন্য এই দোয়াটি পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে ইমানে মুজমাল উচ্চারণ ও অর্থ উল্লেখ করা হলো।

ঈমানে মুজমালঃ امنت بالله كما هو باسمائه وصفاته وقبلت جميع احكامه و اركانه

উচ্চারাণঃ আমানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বি আসমায়িহী ওয়া ছিফাতিহী ওয়াক্বাবিলতু জামিয়া আহ্‌কামিহী ও আরকানিহী।

বাংলা অর্থঃ সর্বমহান সুন্দর নাম ও গুণ বিশিষ্ট আল্লাহ্ তা'আলার উপর ঈমান আনলাম এবং তাঁর আদেশাবলী ও নিষেধসমূহ মেনে নিলাম।

ইমানে মুফাসসাল উচ্চারণ ও অর্থ

আমরা ইতিমধ্যেই ঈমানে মুজমাল সম্পর্কে জেনেছি কিন্তু আপনি কি ইমানে মুফাসসাল উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জানেন? সকলেই জানি যে ঈমান শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস এবং মুফাসসাল শব্দের অর্থ হলো বিস্তৃত বা বিস্তারিত। আল্লাহ তাআলার প্রতিটি বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কথাই প্রকাশ করা হয় ইমানে মুফাসসাল এর ভেতরে। আপনাদের সুবিধার্থে ইমানে মুফাসসাল উচ্চারণ ও অর্থ নিচে উল্লেখ করা হলো।

আরবিঃ امنت بالله وملئكته وكتبه ورسله واليوم الاخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت

উচ্চারণঃ আমানতু বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহী ও কুতুবিহী ওয়াল ইয়াওমিল আখিরী ওয়াল ক্বাদরী খইরিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহি তা'আলা ওয়াল বা'ছি বা'দাল মাউত।

বাংলা অর্থঃ

প্রথমত- আমি ঈমান আনলাম আল্লাহ তা'আলার উপর

দ্বিতীয়ত- ঈমান আনলাম তাঁর ফেরেশতারগণের উপর

তৃতীয়ত- ঈমান আনলাম তাঁর কিতাব সমূহের উপর

চতুর্থত- ঈমান আনলাম তাঁর রাসূলগণের উপর

পঞ্চমত- ঈমান আনলাম আখিরাতের উপর

ষষ্ঠ- ঈমান আনলাম তাক্বদীরের উপর

সপ্তমত- ঈমান আনলাম মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর।

দুরুদ শরিফ উচ্চারণ ও অর্থ

প্রতিটি মুসলিমের দুরুদ শরীফ সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। কারণ আমরা দৈনন্দিন যেসকল দোয়া করে থাকি সেগুলোর মধ্যে দুরুদ শরীফ অন্যতম একটি। দুরুদ শব্দের আরবি অর্থ হচ্ছে সালাত। সালাত শব্দের অর্থ হচ্ছে দুরুদ, শুভকামনা, তাজবিহ ইত্যাদি। দুরুদ শরীফ এমন একটি সম্ভাষণ যা মুসলমানরা নির্দিষ্ট বাক্যাংশ পড়ে থাকে যা সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ শান্তির প্রার্থনার উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়।
তখন আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে দুরুদ শরিফ উচ্চারণ ও অর্থ না জেনে থাকেন তাহলে সেটি আপনার জীবনের ব্যর্থতা। আপনি যেন এই ব্যর্থতা নিয়ে মৃত্যুবরণ না করেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে আজকের এই আর্টিকেল থেকে দুরুদ শরিফ উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

দূরূদ শরীফ আরবিঃ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ’ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ. اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ.

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিউ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মদিম, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাঃ ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত নাযিল করো যেমন রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাঃ ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত নাযিল করো যেমন বরকত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। {সহীহ বুখারীঃ ২৯৭০}

দুরুদে ইব্রাহিম উচ্চারণ ও অর্থ

প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা উচিত সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দুরুদে ইব্রাহীম। কারণ নামাজ পড়ার সময় দুরুদে ইব্রাহিম পড়ার প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমরা সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে জানছি সেহেতু আর্টিকেলের মধ্যে দুরুদে ইব্রাহিম থাকবে না এটি কখনো হয়? দূরুদে ইব্রাহিম পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরুদ পাঠ করবে তার উপর আল্লাহ তায়ালা দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। {মুসলিমঃ ৯২১} এ কথা দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে এটি আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই প্রিয় একটি দরুদ। আপনি যদি দুরুদে ইব্রাহিম উচ্চারণ ও অর্থ না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেল থেকে দুরুদে ইব্রাহিম উচ্চারণ ও অর্থ জেনে নিন।

দুরুদে ইব্রাহিম আরবিঃ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। {বুখারী, মিশকাত} 

তাশাহুদ উচ্চারণ ও অর্থ

আমরা জানি যে নামাজ হলো ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য বিভিন্ন দোয়া পড়তে হয় সেগুলোর মধ্যে তাশাহুদ অন্যতম একটি। কিন্তু আমরা অনেকেই তাশাহুদ উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জানিনা। নামাজের দুই রাকাত পর পর বসাকে তাশাহুদ বলা হয়। এ সময় একটি দোয়া পড়তে হয় চলুন তাশাহুদ উচ্চারণ ও অর্থ জেনে নেওয়া যাক।

তাশাহহুদ আরবিঃ التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বায়্যিবাতু; আস-সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

বাংলা অর্থঃ সব মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।

দুই সিজদার মাঝের দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ

ইসলামে যে পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে নামাজ অন্যতম একটি। নামাজের বিভিন্ন নিয়ম কানুন রয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে এবং আল্লাহ তারা সন্তুষ্ট অর্জন করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নামাজের এই সকল নিয়ম কানুন গুলো এবং দোয়াগুলো মেনে চলতে হবে। এখন আমরা অনেকেই দুই সিজদার মাঝখানে যে দোয়া পড়তে হয় সেটি জানিনা।

আপনি যেহেতু সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল থেকে জানছেন সেও তো আপনাকে দুই সিজদার মাঝের দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে। যেন আপনার নামাজ সঠিক এবং শুদ্ধভাবে হয়। তাহলে চলুন দুই সিজদার মাঝের দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জেনে নিন।

আরবিঃ اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি। {মুসলিম, মিশকাত}

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করুন, আমাকে রহম করুন। আমাকে হেদায়েত দান করুন। আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন।

সিজদার তাসবিস উচ্চারণ ও অর্থ

সিজদা দেওয়ার সময় যে তাসবিহ পড়তে হয় সাধারণত আমরা অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানি। এছাড়া অনেকেই আছে যারা সিজদা দেওয়ার পড়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে বিভিন্ন দোয়া করে থাকে ক্ষমাপ্রার্থনা করে থাকে। আপনি যদি সিজদার তাসবিহ পড়ার পরে এই দোয়াগুলো পড়েন তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে আপনাকে সিজদার তাসবিস উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ কিয়ামতের আলামত গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আরবিঃ سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى

উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা

বাংলা অর্থঃ আমার প্রতিপালক সুমহান ও পবিত্র। {সাহিহুল জামিঃ ৪৭৩৪}

রুকু থেকে উঠার দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ

নামাজের মধ্যে যে সকল নিয়ম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রুকু করা। রুকুতে গিয়ে আমাদেরকে তাসবি পড়তে হয়। রুকু থেকে ওঠার পরও একটি দোয়া রয়েছে সেই দোয়া আমরা অনেকেই জানিনা। যেহেতু নামাজ আমাদের ফরজ এবাদত তাই সঠিকভাবে নামাজ শুদ্ধ করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই রুকু থেকে উঠার দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ জেনে নেওয়া উচিত। আপনাদের সুবিধার্থে রুকু থেকে উঠার দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ উল্লেখ করা হলো।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখেছ, সেভাবে নামাজ পড়। নামাজে রাসূল সাঃ রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যে দোয়া পড়তেন সেটি হলঃ

আরবিঃ اَللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْد-

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ।  {বুখারি, মুসলিম, মিশকাত}

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা তোমারই।

তারপরে পড়তেন আরবিঃ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْداً كَثيراً طَيِّباً مُبارَكاً فِيهِ

উচ্চারণঃ রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান কাছিরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফিহি।

বাংলা অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা অঢেল পবিত্র ও বরকত রয়েছে এমন প্রশংসা। {বুখারি}

রুকুর তাসবিহ উচ্চারণ ও অর্থ

আপনি যদি চান আপনার নামাজ সঠিকভাবে আদায় হোক তাহলে আপনাকে অবশ্যই নামাজের সকল নিয়মকানুন গুলো মেনে চলতে হবে। নামাজের রুকুতে যে সকল তাসবিহ পড়তে হয় সেগুলো সঠিকভাবে পড়তে হবে। যদি আপনি রুকুর তাসবিহ উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই বিস্তারিতভাবে জেনে নিন না হলে আপনার নামাজ সঠিক হবে না।

নামাজের ছয়টি ফরজ এর মধ্যে রুকু হলো অন্যতম একটি। রুকুতে গিয়ে কি বলতে হয় আমরা অনেকেই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানিনা। যার ফলে সঠিকভাবে আমাদের নামাজ আদায় হয় না। আপনাদের সুবিধার্থে রুকুর তাসবিহ উচ্চারণ ও অর্থ উল্লেখ করা হলো।

আরবিঃ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

উচ্চারণঃ সুবহা-না রব্বিয়াল আ`যিম। {তিরমিজি, আবু দাউদ}

বাংলা অর্থঃ আমার প্রভু পবিত্র ও মহামহিম।

আরবিঃ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফির লী। {বুখারি ও মুসলিম, মুসনাদে আহমদ}

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন।

সানা দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ

নামাজ শুরু করার আগে সানাপড়া জরুরী। যেহেতু আমরা আজকের এই আর্টিকেলে সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ নিয়ে আলোচনা করছি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া যেটি নামাজ শুরু করার পূর্বে আমাদেরকে বলতে হয় না হলে নামাজ সঠিকভাবে হয় না এই গুরুত্বপূর্ণ দোয়াটি অর্থাৎ সানা দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আপনারা যারা সানা দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জানেন না তারা বিস্তারিত জেনে নিন।

আরবিঃ سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالِىْ جَدُّكَ وَلَا اِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণঃ সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআ-লা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গায়রুক।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি আপনার নাম বরকতপূর্ণ, আপনার মাহাত্ন সুউচ্চ এবং আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। {সহিহ বুখারিঃ ৮০৪}

আরো পড়ুনঃ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে

নামাজের নিয়ত উচ্চারণ ও অর্থ

আমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। সাধারণত আল্লাহতালার এবাদত পালন করার জন্যই এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজ শুরু করার জন্য আমাদেরকে নামাজের নিয়ত করতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই নামাজের নিয়ত উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জানিনা। যেহেতু এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কার্যকরী তাই নামাজের নিয়ত উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।

ফজরের ২ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলা দিক ফিরিয়া ফজরের দুইরাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার।

জোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তাআলঅ মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলা দিক ফিরিয়া জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার।

আছরের ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকায়াতি সালাতিল আছরি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলা দিক ফিরিয়া আছরের চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার।

মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা ছালাছা রাকয়াতি সালাতিল মাগরিব ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলা দিক ফিরিয়া মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার।

এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি এশায়ি ফারজুল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলা দিক ফিরিয়া এশার চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার।

জায়নামাজের দোয়া - অযুর দোয়া

আমরা সকলে জানি যে নামাজ পড়ার আগে আমাদেরকে ওযু করতে হয়। অজু করার মাধ্যমে শরীরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করে এরপরে নামাজ শুরু করতে হয়। অজু ছাড়া কখনোই নামাজ শুদ্ধ হয় না। আমরা অনেকেই অযুর দোয়া সম্পর্কে জানতে চাই। অথবা অজু করার পরে জায়নামাজে গিয়ে জায়নামাজের দোয়া না জানা থাকার কারণে পড়তে পারি না। জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরুর পূর্বেই এই দোয়া পড়তে হয়।

জায়নামাজের দোয়া উচ্চারনঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহ তু ওয়াজ্ হিয়া লিল্লাজি, ফাত্বরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আরদ্বঅ হানি-ফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকী-ন।

বাংলা অর্থঃ নিশ্চই আমি তারই দিকে মুখ করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বাস্তবিকই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

অজু করার শুরুতে বলতে হয়ঃ

আরবিঃ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলা অর্থঃ পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

অজু করার সময় পড়তে হয়ঃ

আরবিঃ اَللَّخُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসিলি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফি রিযক্বি।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিযিক্বে বরকত দিয়ে দাও।

শেষ বৈঠকে অন্যান্য দোয়া

নামাজ শুদ্ধ করার জন্য শেষ বৈঠকে দোয়া পড়া জরুরি। নামাজ হচ্ছে আমাদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। ঈমান আনার পরে আমাদেরকে নামাজ আদায় করতে হয়। আমরা অনেকেই শেষ বৈঠকে অন্যান্য দোয়া সম্পর্কে জানিনা। আপনাদের সুবিধার্থে এই আর্টিকেলে শেষ বৈঠকে অন্যান্য দোয়া উল্লেখ করা হলো।

তাশাহুদ আরবিঃ التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াততায়্যিবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহু আসসালা-মু আলায়না ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন। আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু।

দরুদে ইব্রাহিমঃ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হিম, ইন্নাকাহামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা অ আলা আ-লি ইবরা-হিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

দোয়া মাসুরা আরবিঃ اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা । ওয়ালা ইয়াগ ফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লি, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা; ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।

ফরজ সালাতে সালাম ফেরানোর পর দোয়া

নামাজের সালাম ফেরানোর পরে বিভিন্ন দোয়া পড়তে হয়। আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অথবা আল্লাহতালার সন্তুষ্ট অর্জন করার জন্য বিভিন্ন দোয়া পড়তে হয় নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর পরে। এখন আমরা অনেকেই ফরজ সালাতে সালাম ফেরানোর পর দোয়া সম্পর্কে জানিনা। আপনাদের জানার সুবিধার্থে ফরজ সালাতে সালাম ফেরানোর পর দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

হজরত সাওবান রাঃ বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাঃ নামাজ শেষে তিনবার ইসতেগফার অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে পড়তেন। এর পরে পড়তেন,

আরবিঃ اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আংতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জাল ঝালালি ওয়াল ইকরাম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি শান্তির প্রতীক। তুমিই শান্তির উৎস এবং শান্তির ধারা তোমার কাছ থেকেই প্রবাহিত। তুমি বরকতময় হে মহত্ব ও সম্মানের অধিকারী। {মুসলিম, মিশকাত}

নবিজী সাঃ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সালাম ফিরিয়ে বলতেন,

আরবি উচ্চারণঃ لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكَ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْر

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহু হামদ, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

বাংলা অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক তার কোনো শরিক নেই। রাজত্বও তার। প্রশংসা শুধু তারই। তিনিই সব কিছুর সর্বশক্তিমান। {বুখারি ও মুসলিম}

ফরজ সালাতের পর তাসবিহ

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি মুসলিমের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। শুধু নামাজ পড়া হয়ে গেলে শেষ নয় এরপরে আরো বিভিন্ন এবাদত রয়েছে। যেমন প্রতিটি ফরজ নামাজের পরে বেশ কিছু তাসবিহ রয়েছে। আমরা অনেকেই ফরজ সালাতের পর তাসবিহ কি পড়তে হয় এ বিষয়ে সম্পর্কে জানিনা। আপনাদের জানার সুবিধার্থে ফরজ সালাতের পর তাসবিহ গুলো উল্লেখ করা হলো।

আমরা অনেকেই জানিনা ফরজ নামাজের পরে তাসবীহ পাঠ করার কতটা ফজিলত রয়েছে। একটি হাদিসে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ আল্লাহু আকবার বলবে আর শত পূর্ণ করবে এই বলে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়। {সহিহ মুসলিমঃ ৫৯৭}

আরো পড়ুনঃ যে দান সবচেয়ে উত্তম জেনে নিন

আয়াতুল কুরসি

পবিত্র কুরআনের সব থেকে শ্রেষ্ঠতম আয়াত হল আয়াতুল কুরসি। আমরা অনেকেই আয়াতুল কুরসি জানিনা। কিন্তু আপনারা এর ফজিলত জানলে অবাক হবেন। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে। কোরআনের চূড়া সুরা বাকারা। তাতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের অন্য আয়াতের নেতা। সেটা হলো আয়াতুল কুরসি। {সুনানে তিরমিজিঃ ৩১১৯}

আয়তুল কুরসি আরবিঃ اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিইয়্যুল আজীম। {সুরা বাকারাঃ ২৫৫}

বাংলা অর্থঃ আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁকে সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন।

তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।

মৃত্যুর পর সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার দোয়া

আমরা সকলেই জান্নাতে যেতে চাই। সাধারণত জান্নাতের যাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের এবাদত পালন করে থাকি আল্লাহকে খুশি করার আশাই। কারণ আল্লাহতালা যদি আমাদের উপরে খুশি হয়ে যায় তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে এবং নির্দ্বিধায় জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। এখন আপনি যদি মৃত্যুর পরে সরাসরি জান্নাতে যেতে চান তাহলে মৃত্যুর পর সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার দোয়া করতে পারেন আল্লাহতালার কাছে।

হাদিসে এসেছে, কেউ যদি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল ও সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়ে। আর সেদিন সে মারা যায়, আল্লাহর ইচ্ছায় সে জান্নাতে যাবে। {বুখারি} মৃত্যুর পর সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার দোয়া কি হলোঃ

আরবিঃ أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমত তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিগুলো পালনে সচেষ্ট আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপগুলো স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।

মোনাজাতের দোয়া

আমরা মোনাজাত করার সময় বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়ে থাকি কিন্তু আপনি যদি সঠিকভাবে মোনাজাত করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই মোনাজাতের দোয়া সম্পর্কে জানতে হবে। যেহেতু আমরা সবাই মুসলিম সেহেতু আমাদেরকে সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আপনাদের সুবিধার্থে মোনাজাতের দোয়া উল্লেখ করা হলো।

আরো পড়ুনঃ জুম্মার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত

আরবিঃ رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَـنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ

বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বানা আতিনা ফিদদুনয়া হাসনাতাও অফিল আখিরতি হাসনাতাও অকিনা আ’যাবান নার

বাংলা অর্থঃ আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়াতে যা কল্যাণকর এবং পরকালে যা কল্যাণকর তা দান করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন! {সূরা আল-বাকারাঃ ২/২০১}

আরবিঃ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ

বাংলা উচ্চারণঃ রব্বানা তাকব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম

বাংলা অর্থঃ আমাদের প্রভু! আমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করুন কেননা আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। {সূরা আল-বাকারাঃ ২/১২৭}

সকল প্রকার ইসলামিক দোয়া ও অর্থঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে রাব্বি জিদনি ইলমা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ, কালেমা তাইয়্যেবা উচ্চারন ও অর্থ, কালেমা শাহাদাত উচ্চারন ও অর্থ, কালেমা তামজিদ উচ্চারন ও অর্থ, কালেমা তাওহীদ উচ্চারন ও অর্থ, দোয়া কুনুত উচ্চারন ও অর্থ, দোয়া মাসুরা উচ্চারণ ও অর্থ, ইমানে মুজমাল উচ্চারণ ও অর্থ, ইমানে মুফাসসাল উচ্চারণ ও অর্থ, দুরুদ শরিফ উচ্চারণ ও অর্থ, দুরুদে ইব্রাহিম উচ্চারণ ও অর্থ, তাশাহুদ উচ্চারণ ও অর্থ আলোচনা করা হয়েছে।

আরো আলোচনা করা হয়েছে দুই সিজদার মাঝের দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ, সিজদার তাসবিস উচ্চারণ ও অর্থ, রুকু থেকে উঠার দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ, রুকুর তাসবিহ উচ্চারণ ও অর্থ, সানা দোয়া উচ্চারণ ও অর্থ, নামাজের নিয়ত উচ্চারণ ও অর্থ, জায়নামাজের দোয়া, অযুর দোয়া, শেষ বৈঠকে অন্যান্য দোয়া, ফরজ সালাতে সালাম ফেরানোর পর দোয়া, ফরজ সালাতের পর তাসবিহ, আয়াতুল কুরসি, মৃত্যুর পর সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার দোয়া, মোনাজাতের দোয়া সম্পর্কে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url