গলা ব্যথা কেন হয়ে থাকে - গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে কোন না কোন এক সময়ে গলা ব্যথা হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা এই গলা ব্যথা হওয়ার কারণ বা লক্ষণ গুলো কি। তাই আজকে আমরা গলা ব্যথা কেন হয়ে থাকে এবং গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে একটি পড়বেন।
ছবি
আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের মাঝে এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আপনার একটু হলেও জীবনে চলার পথে উপকারে আসবে। তাই চলুন দেরি না করে আমরা শুরু করা যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ গলা ব্যথা কেন হয়ে থাকে - গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি

গলা ব্যথা কি

খাবার খাওয়ার সময় যখন সামান্য পরিমাণ ব্যথা অনুভূত হয় এবং এই খাদ্য মুখগহবর থেকে খাদ্যনালীতে যাবার আগে খাদ্য চিবিয়ে গিলার সময় যে ব্যথা অনুভূত হয় তাকে গলা ব্যথা বলা হয়ে থাকে। এই ব্যথার পরিমাণ বয়স ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। অর্থাৎ গলা ব্যথা কি এ প্রশ্নের উত্তর আশা করি আপনারা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছে।

গলা ব্যথা কেন হয়ে থাকে - গলা ব্যথার কারণ কি- গলা ব্যথার লক্ষণ

বিভিন্ন ধরনের এলার্জিজনিত অসুখ থেকে এই গলা ব্যাথা সৃষ্টি হয়। অনেকে বলে দেখবেন যে সময় এখন খারাপ এবং বেশি বেশি জ্বর সর্দি হয় তখন সবাইকে সাবধান থাকতে বলে। গলা ব্যথা সাধারণত একটি ভাইরাস জনিত কারণ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের আক্রমণের ফলে এই গলা ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় যে শিশুর সর্দি কাশি হয়েছে কিছু সেটা চাই না। কিন্তু না খাওয়ার কারণ তারা তো বলতে পারেনা এ সময় তাদের গলা ব্যথা হয়।  আবার অনেক সময় খুশখুশে কাশি থেকে গলা ব্যথা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও অনেকদিন দেখা যায় গলার টনসিল ফুলে গেছে এবং এর ফলে গলা ব্যথার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ সর্বোপরি যদি এক কথায় বলতে হয় তাহলে বলা যায় জ্বর,সর্দি,কাশি,খুসখুসে ভাব,বায়ু দূষণ,সর্দি গর্মি,ঠান্ডা এসব কিছু থেকে গলা ব্যথা সৃষ্টি হয়ে থাকে।  অর্থাৎ গলা ব্যথা কেন হয়ে থাকে আপনারা হয়তো এতক্ষণে বিস্তারিত জেনে গেছেন। তবে যে সকল কারণগুলো আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশি সময়ই  ঠান্ডার ফলে গলা ব্যথা হয়ে থাকে। তাই আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যেন ঠান্ডা না লাগে।

গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি

গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই গলা ব্যথা কেন হয় সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ একবার গলা ব্যথা হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের কষ্ট হয়। গলায় কফ জমে যায় এর ফলে খেতে পারে না। চলুন তাহলে এবার আলোচনা করা যাক গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি
  1. ঠান্ডা মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই সর্বপ্রথম আমাদের সতর্ক থাকা লাগবে যাতে ঠান্ডা না লাগে। কারন ঠান্ডা থেকে গলা ব্যথার লক্ষণ শুরু হয়।
  2. প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
  3. ঠান্ডা যে কোন জিনিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন কুলফি,মালাই,আইসক্রিম ইত্যাদি
  4. জ্বর সর্দি কাশি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  5. বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  6. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনভাবেই খাওয়া দাওয়া করা যাবে না। পচা বাঁশি নোংরা এসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
  7. অনেক সময় দেখা যায় যে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার আমরা খেয়ে থাকি। এসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
  8. এলার্জি জাতীয় কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না।
  9. উচ্চস্বরে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা যাবে না।
  10. এছাড়াও এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময় তাই অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন ডেঙ্গু থেকে  জ্বর না হয়ে কাশির সৃষ্টি হয়।
এতক্ষণ ধরে আমরা অনেকগুলো পয়েন্ট গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম। আশা করি আপনারা যদি নিয়ম মত এই পয়েন্ট গুলো অনুসরণ করে জীবন যাপন করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনারা গলা ব্যথা থেকে বাঁচতে পারবেন।

গলা ব্যথা হলে করণীয় কি - গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া কিছু নিয়ম - কি খেলে গলা ব্যথা সেরে যাবে

আমাদের প্রত্যেকেরই অসতর্কতা বসত কোন না কোন সময় গলা ব্যাথা হয়ে থাকে। আমরা যদি একটু সতর্ক থাকি তাহলে আমরা এই গলা ব্যথা থেকে বাঁচতে পারবো। তারপরও যদি গলা ব্যথা হয়ে যায় তাহলে আমাদের গলা ব্যথা হলে করণীয় কি,গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া কিছু নিয়ম এবং কি খেলে গলা ব্যথা সেরে যাবে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। তাই আসুন এ সম্পর্কে আমরা বিশেষ কিছু করতে নেই।
  1. গলা ব্যথা হলে সর্বপ্রথম তাকে বারবার গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে। এতে করে  গলা ব্যথা থেকে অনেকটা আরাম পাবে।
  2. কুসুম কুসুম গরম পানি খাবার সাথে খাওয়া খেতে হবে। তা না হলে বারবার  নরমাল পানি খেতে থাকলে এ ব্যাথা সহজে দূর হবে না।
  3. যেসব খাবারে এলার্জি যেমন কচুর শাক, ওল, কচু এসব খাবার গলা ব্যাথার সময় খাওয়া যাবেনা।
  4. গলা ব্যথা হলে গরম গরম ভাপ গলায় দেওয়া লাগবে। এতে করে অনেক আরাম অনুভূত হবে।
  5. আদা গলার জন্য বিশেষ উপকারী। তাই গলা ব্যথা হলে অবশ্যই বেশি করে আদা কুচি মুখে রাখতে হবে।
  6. বেকিং সোডার কার্যকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। হালকা লবণ গরম পানিতে বেকিং সোডা দিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যথার অনেকটাই সেরে যাবে। 
  7. এছাড়াও মধু গলা ব্যাথার কাজে বিশেষ উপকারী ভূমিকা হিসেবে কাজ করে। তাই গলা ব্যথা হলে অবশ্যই আমাদের প্রতিদিন অন্তত হলে তিন চা চামচ মধু খাওয়া লাগবে।
  8. এতক্ষণ আমরা গলা ব্যথা হলে করণীয় কি এ সম্পর্কে যে সকল খাবার কথা বলেছি তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম হলো কালিজিরা এবং গোলমরিচ। মধুর ভেতর সামান্য পরিমাণ কালিজিরা মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খেলে অবশ্যই আপনার গলা ব্যথা দুই-তিন দিনের মাঝে সেরে যাবে। পৃথিবী জুড়ে এই কালিজিরার কার্যকারিতা ব্যাপক।
  9. গলা ব্যথা হলে ভাতের সাথে ঘি দিয়ে খেলে গলা ব্যথা থেকে অনেকটাই উপশম পাওয়া যায়।
  10. এছাড়াও গলা ব্যথা হলে বেশি বেশি পরিমাণ গ্রিন টি ও ব্ল্যাক কফি পান করতে হবে।এতে করে আপনার গলার জন্য অতি উপকার হবে এবং অতি দ্রুত মাত্রায়  গলা ব্যথা সেরে যাবে।
আমরা এতক্ষণ ধরে আপনাদের মাঝে গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া কিছু নিয়ম নিয়ে যে সকল উপদেশ দিলাম এগুলো প্রত্যেকটি কার্যকর ও পরীক্ষিত। আপনারা যদি এই নিয়মগুলো মেনে চলতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনারা গলা ব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারেন। এখানে প্রত্যেকটি উপদেশ গলা ব্যাথা থেকে রেহাই পাবার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আশা করি আপনারা গলা ব্যথা হলে করণীয় কি,গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া কিছু নিয়ম এবং কি খেলে গলা ব্যথা সেরে যাবে এ সকল প্রশ্নের উত্তর ঠিক মত পেয়ে গেছেন।

গলা ব্যথা কমানোর ঔষধ - গলা ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট এর নাম

আমরা এতক্ষণ ধরে গলা ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত অনেক কিছু সম্পর্কে জেনে এসেছি। আশা করা যায় যে আপনারা যদি আমাদের দেওয়া উপরের নিয়ম গুলো ঠিক মত ভাবে মেনে চলেন তাহলে কোন প্রকার ঔষধ ছাড়াই এই গলা ব্যথা সেরে যাবে। তারপরও যদি আপনারা গলা ব্যথা কমানোর ঔষধ এবং গলা ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট এর নাম কি এই প্রশ্ন মনের মধ্যে এসে থাকে তাহলে আমরা এটি নিয়েও আপনাদের মাঝে আলোচনা করে দিব।
অনেক দেখবেন গলা ব্যথা হলে সাথে সাথে বিভিন্ন রকমের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খেয়ে থাকে। যেমন নাপা, নাপা এক্সট্রা,এভিল, ফেক্সো ইত্যাদি। আমরা এ সকল ওষুধ না জেনেই অনেকেই খেয়ে থাকি। কিন্তু এগুলা খাওয়া ঠিক না শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই আপনার কি পরিমাণে গলা ব্যথা আছে তার উপর ভিত্তি করে খেতে হবে। এসব ওষুধের মধ্যে ইফিক্স ১০০, সেফিনার১০০, ক্লাফোরেন ১০০, নাপা,আ্যসিটমিনোফেন,টাইলেনল  ইত্যাদি ঔষধ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ সকল ওষুধ অবশ্যই গলা ব্যথার জন্য অতি উপকারী। কিন্তু কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আপনারা এসব ওষুধ খাবেন না।

গলা ব্যথা দূর করার দোয়া - গলা ব্যথা থেকে নিস্তার পাবার আমল

ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক গলা ব্যথা নিয়ে বিভিন্ন আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ গলা ব্যথা নিয়ে বিভিন্ন আমল করেছেন এবং গলা ব্যথা দূর করার দোয়া ও গলা ব্যথা থেকে নিস্তার পাবার আমল সম্পর্কে তিনি বিশেষভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। উক্ত দোয়াটি গলা ব্যাথা হলে অতিমাত্রায় কার্যকরী। দোয়াটি হলোঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা বি-আসমায়িকাল হুসনা ইয়া মান খালাক্বানী ওয়া সাওয়্যানী ইয়ামান রাযাকানী ওয়া রাব্বানী ইয়া মান আতআমানী ওয়া সাক্বানী ইয়া মান লাওয়্যাসী ওয়া আদনানী ইয়া মান আছামানী ওয়া কাফানী ইয়া মান হাফাযানী ওয়া কালানী ইয়া মান ওয়াক্বক্বাফানী ওয়া হাদানী ইয়া মান আয়াযযানী ওয়া আছনানী ইয়া মান আমাতানী ওয়া আহইয়ানী ইয়া মান আলইয়াসনী ওয়া ওয়াল্লানী সুবহানাকা লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনায যোয়ালিমীন।

আশা করা যায় এই দোয়াটি পড়লেনিশ্চিত আপনার গলা ব্যথা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। এটি কোনরকম আমাদের কথা না এটা একমাত্র রাসূল সাঃ এর কথা।

আরো পড়ুনঃ রক্ত দেওয়ার আগে কি কি নিয়ম মানতে হবে

সর্বশেষ কিছু কথা

আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে গলা ব্যথা কেন হয়ে থাকে এবং গলা ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি এ সকল বিষয় ছাড়াও আরো অনেক কিছু বিস্তারিতভাবে আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করা যায় যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জীবনে চলার পথে অতি প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে। এরপরও আপনাদের মাঝে গলা ব্যাথা নিয়ে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আপনারা আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। আমরা যত সম্ভব চেষ্টা করব আপনাদের সমস্যার সমাধান করার। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই বলে আজকের এই টপিককে এখানেই শেষ করলাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url