রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী
রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নন এমন ব্যক্তি খুব কমই
রয়েছে। তাই আপনাদের জন্য এই পোস্টে রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী চমৎকারভাবে
তুলে ধরব। অতএব, রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী পুরোপুরি জেনে নিতে হলে আপনারা এই
সম্পূর্ণ পোস্টটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।
রানী এলিজাবেথ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী সাম্রাজ্যের
একমাত্র অধিপতি নারী। আধুনিক সমাজে রাজতন্ত্র যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিলো, সেখানে
রানী এলিজাবেথ একদম ধ্রুবতারা হিসেবে ব্রিটিশ সিংহাসনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই
মহীয়সী নারী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্ট সাজিয়েছি। এই পোস্টটি
পুরোটা করলে আপনারা রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট
ধারণা পাবেন। তাই দেরি না করে এখনই পোস্টটি পড়ে ফেলুন।
পোস্ট সূচিপত্র - রাণি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী জেনে নিন
রানী এলিজাবেথ কে ছিলেন?
রানী এলিজাবেথ ছিলেন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী
রাষ্ট্রপ্রধান। পৃথিবীর ইতিহাসে রানী এলিজাবেথের মত এত দীর্ঘ সময় আর কোনো নারী
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ছিলেন না। রানী এলিজাবেথ এর জন্ম তারিখ ছিল ২১ এপ্রিল,
১৯২৬। রানী এলিজাবেথ এর স্বামী ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। জিজ্ঞাসা করেন রানী এলিজাবেথ
কোন দেশের রানী ছিলেন? তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই রানী এলিজাবেথ মূলত ব্রিটেনের
রানী ছিলেন কিন্তু তার সাম্রাজ্য সমগ্র ইউরোপ জুড়ে সুবিস্তৃত ছিল।
তাহলে রানী এলিজাবেথ কতটি দেশের রানী ছিলেন? তিনি যুক্তরাজ্য ছাড়াও ইউরোপের
প্রায় ৩২ টি দেশের রানী তথা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি
মৃত্যুর সময়ও তিনি কমনওয়েলথ ভুক্ত ১৪ টি দেশের রানী ছিলেন। সুতরাং রানী
এলিজাবেথ কে ছিলেন এবং রানী এলিজাবেথ কতটি দেশের রানী ছিলেন সে সম্পর্কে আপনারা
জেনে ফেললেন। আর রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী আপনারা পোস্টের পরবর্তী অংশ পড়লেই
জানতে পারবেন।
রানী এলিজাবেথ এর জীবন কাহিনী
প্রিয় বন্ধুরা আপনারা ইতোমধ্যে রানী এলিজাবেথ এর জন্ম তারিখ কবে ছিল, রানী
এলিজাবেথ এর স্বামী কে ছিলেন সে সকল তথ্য জেনেছেন। তাছাড়াও রানী এলিজাবেথ কোন
দেশের রানী ছিলেন সেটিও অবগত হয়েছেন। এবার রানী এলিজাবেথ এর জীবন কাহিনী জেনে
নেওয়ার পালা। রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী এখন আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্ত
পরিসরে তুলে ধরলাম। রানী এলিজাবেথ ৭০ বছর ২১৪ দিন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের রানী
হিসেবে ইউরোপের একটি অংশ শাসন করেন।
মাত্র ২৬ বছর বয়সে রানী এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ১৯৫৩ সালে। তার ইচ্ছা
অনুযায়ী তার অভিষেক অনুষ্ঠানটি সেসময় টিভিতে সম্প্রচার করা হয়েছিল। যে পথ ধরে
রানী এলিজাবেথ সেদিন হেঁটেছিলেন, তার দুপাশে রাস্তার ধার দিয়ে উৎসাহী মানুষের চরম
ভিড় ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বৃটেনে এটিই ছিল প্রথম কোন উৎসবের আমেজ।
সোনায় মোড়ানো শকটের উপর দিয়ে রানী হেঁটে যাবেন সেই দৃশ্য দেখার জন্য শত শত মানুষ
উৎগ্রীব হয়ে তাকিয়ে ছিল।
আরও পড়ুন: পবিত্র আল কোরআনে কাদের সফল বলা হয়েছে
অতঃপর ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবিতে ঢোকার জন্য রানী যখন গাড়ি থেকে নামলেন, তখন
আড়াইশো জনের এক বৃহৎ শোভাযাত্রা ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবির দিকে যাত্রা শুরু
করলো। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৮-১০ হাজার দর্শকের মাঝে রানীকে বিশেষ
তেল মাখিয়ে তার দেহ থেকে অলংকারগুলো খুলে একটি বিশেষ সাদা পোশাক পড়ানো
হলো। রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনীতে রানী এলিজাবেথ প্রিন্স ফিলিপকে প্রনয়ের
মাধ্যমে বিবাহ করেছিলেন। তারা দুজনেই একে অপরকে পছন্দ করতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রিন্স ফিলিপ ও রানী এলিজাবেথের প্রথম দেখা হয়।
শুরুতে তাদের বন্ধুত্ব থাকলেও পরে তা প্রেমের সম্পর্কের রূপ লাভ করে। রাজকুমার
ফিলিপের সুদর্শন চেহারা রানী এলিজাবেথের হৃদয় কেড়ে নেয়। সে সময় তারা দুজন
দজনকে প্রচুর চিঠি লিখতো। এলিজাবেথ ছিলেন অত্যন্ত লাজুক ও শান্তশিষ্ট প্রকৃতির।
রাজকুমারী এলিজাবেথের যখন ২১ বছর বয়স, তখন ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপের সাথে তার
বিয়ে সম্পন্ন হয়। যদিও ফিলিপ ছিলেন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ।
রানী এলিজাবেথ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের রানী হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর থেকোই অত্যন্ত
সততা ও নিষ্ঠার সাথে সকল দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি পৃথিবীর
অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেন। রানী সিংহাসনে আরোহণের সুবর্ণ জয়ন্তী, রানীর ৯০ তম শুভ
জন্মদিন সকল কিছুই সাড়ম্বরে পালিত হয়। বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী হয়েও তিনি
কখনো ক্ষমতার অহংকার করেননি। সুতরাং পোস্টের এই অংশটি পড়ে আপনারা রানি
এলিজাবেথের জীবন কাহিনী চমৎকারভাবে জেনে নিলেন।
রানী এলিজাবেথ এর ক্ষমতা
প্রিয় বন্ধুরা পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ থেকে আপনারা রানি এলিজাবেথের জীবন
কাহিনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জেনেছেন। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানী
এলিজাবেথের ক্ষমতা ছিল দারুণ। সে সকল ক্ষমতা তিনি কেবল একাই প্রয়োগ করতেন। তবে
চলুন রানী এলিজাবেথের সকল ক্ষমতা সম্পর্কে এবার ধারণা অর্জন করি।
আরও পড়ুন: যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম
- রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি পৃথিবীর ১৬ টি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রানী ছিলেন। তার অনুমতি ব্যতীত এই সকল রাষ্ট্রের কোন আইন পাস করা যেত না।
- কোনরকম পাসপোর্ট ছাড়াই তিনি পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র ঘুরে বেড়াতে পারতেন। এমনকি তার কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স এরও প্রয়োজন হতো না।
- টেমস নদীর যত রাজহাঁস রয়েছে সবই তার মালিকানাধীন। তেমনিভাবে যুক্তরাজ্যে ও ওয়েলসে যত ডলফিন রয়েছে সবগুলোর মালিক হলেন আর্থ কুইন এলিজাবেথ।
- বছরে ২ বার জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে তার জন্মদিন পালিত হতো। কুইন এলিজাবেথের একজন ব্যক্তিগত কবিও ছিলেন। যিনি বিভিন্ন কবিতা রচনা করে রানীর মনোরঞ্জন করতেন।
- সরকার নিয়োগ দেওয়া এবং শ্বাসনকর্তা নিয়োগ করার একমাত্র ক্ষমতা ছিল রানী এলিজাবেথের হাতে। রাষ্ট্রের যত আইন পাস হতো তিনি সেগুলোতে স্বাক্ষর করতেন।
- প্রসিকিউশনের কোন ক্ষমতা ছিল না তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করার। তিনি যেন একপ্রকার সে সকল আইনের ঊর্ধ্বে ছিলেন। কোন মামলা বা আইনি জটিলতায় তাকে সাক্ষী দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
- ক্ষমতার বিচারে তিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী। তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন করেছেন।
- গোটা ব্রিটেনে রানী ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালিয়েছেন।
- রানীর পোষ্য তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল দুটি কচ্ছপ, একটি হাতি, ৩০ টি কুকুর, অনেকগুলো ঘোড়া ও অন্যান্য পোষা প্রাণী। এমনকি তিনি ২৩ টি বিশাল বিশাল জাহাজের মালিক ছিলেন।
- কমনওয়েলথভুক্ত ব্রিটিশ অঞ্চলে তিনি ১ লক্ষ ৭৫ হাজারের বেশি টেলিগ্রাম প্রেরণ করেন। তাছাড়া ৪৫ হাজার পিস ক্রিসমাস কার্ড লেখার পাশাপাশি তিনি ৯০ হাজার কেক প্রাসাদে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
- ইংল্যান্ডের ধর্মীয় গুরু ও ধর্মের মাথা হিসেবে রানী এলিজাবেথকে মনে করা হতো। সুতরাং একজন ক্ষমতাধর শাসনকর্তা হিসাবে রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী আপনারা জেনে ফেললেন।
রানী এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর
প্রিয় বন্ধুরা পোষ্টের পূর্ববর্তী অংশ হতে আপনারা রানি এলিজাবেথের জীবন
কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলী জেনেছেন। রানী এলিজাবেথ তার এই দীর্ঘ শাসন
আমলে দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। সর্বপ্রথম ১৯৬১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী রানী
এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেন। তখন তিনি ঢাকা সুগন্ধা গেস্ট হাউসে অবস্থান
করেছিলেন এবং আদমজী জুট মিল পরিদর্শন করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে দ্বিতীয়বারের মতো
রানী এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেন।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তাকে স্বাগত জানিয়ে ১৮ মাইল দীর্ঘ
পথ সারিবদ্ধভাবে রঙিন পোস্টারে সাজান। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে রানীককে গার্ড
অফ অনার প্রদান করা হয়। এ সময় রাণী চট্টগ্রাম ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান
ভ্রমণ করেন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় যাওয়ার সময় তিনি ট্রেনে ভ্রমন
করেছিলেন। বাংলাদেশের ৫০ তম স্বাধীনতা দিবসে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা
বার্তা পাঠান। বাংলাদেশের মানুষের সাথে রানীর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত বহুত্বপূর্ণ।
রানী এলিজাবেথ কবে মারা যায়
যুক্তরাজ্য তথা কমনওয়েলথ দেশগুলোর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান আর্থ কুইন
খ্যাত রানী এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল
ক্যাসেলে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ৭০ বছর তিনি ব্রিটিশ সিংহাসনে
দায়িত্ব পালন করেন। তার এই সুদীর্ঘ জীবনে তিনি যথাযথভাবে রাষ্ট্রের সকল
কর্মকান্ড পালন করেন। রানীর সততার জন্য তিনি পৃথিবী অন্যতম মহীয়সী নারীতে
রূপান্তরিত হন। আপনারা মহারানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী সম্পর্কে যদি আবারও জানতে
চান তবে পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ পুনরায় পড়ে ফেলতে পারেন।
উপসংহার
৯৬ বছর বয়সে মহারানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর সাড়ম্বরে তার অন্তষ্টিক্রিয়া পালন
করা হয়। পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর নারী হয়েও তিনি ক্ষমতার কোনো অপব্যবহার
করেননি, বরং তিনি তার প্রজাদের প্রচুর ভালবাসতেন। মৃত্যুৃকালে রানী এলিজাবেথ চার
সন্তানকে রেখে গিয়েছিলেন। সুতরাং এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে থাকলে আপনারা
নিশ্চিতভাবেই রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন।
রানি এলিজাবেথের জীবন কাহিনী আপনার বন্ধুদের জানাতে চাইলে এখনই এই পোস্টটি শেয়ার
করুন এবং নিত্যনতুন বিভিন্ন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। @23891
মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url