ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি না? তা জানতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো করতে হবে। কেননা নিচে ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি না? সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ছবি

পেজ সূচিপত্র: ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি - ব্যাংকের সুদ কি হালাল

সুদ সর্বাবস্থায় হারাম। তা ব্যাঙ্কিং চ্যানেলের মাধ্যমে হোক কিংবা ব্যক্তিগতভাবে। সুদ হারাম হওয়ার স্পষ্ট বিধান সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেন, "যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।" (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

সুদ হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য হাদিসও রয়েছে, জাবের (রা:) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সকল লোকদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন যারা সুদ খায়, সুদ দেয় সুদের লেখক এবং তার উপর সাক্ষীদ্বয়কে। আর বলেছেন, "ওরা সকলেই সমান।"

সুতরাং এ কথা স্পষ্ট যে ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংকের সম্পূর্ণরূপে হারাম। যদিও কিছু কিছু তথাকথিত আধুনিক পন্থী ভন্ড আলেম দাবি করেন যে, ব্যাংকের শুরুতে নেওয়া যেতে পারে। তবে এই কথার কোন ভিত্তি নেই এবং মূলধারার ওলামায়ে এই ব্যাপারে ঐক্য যে, সুদি ব্যাংকের গ্রহণ করা বৈধ হবে না। 

ইসলামিক দৃষ্টিতে সুদ দেওয়া আর নেওয়া হারাম

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি না? এ বিষয়ে সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। যাই হোক, ইসলামের বিধান অনুসারে সুদ দেওয়া, সুদ নেওয়া, সুদের সাক্ষী হওয়া এবং যেকোনোভাবে সুদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সম্পূর্ণ রূপে হারাম। 

শুধু হারাম হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে অসংখ্য বিবরণ রয়েছে। মহান আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সুদের ওপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। 
যেমন মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (লোকদের নিকট) তোমাদের সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা এরূপ না কর (সুদ না ছাড়) তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের তরফ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা কবুল করে নাও। কিন্তু যদি তোমরা তোওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরা কারো উপর অত্যাচার করবে না এবং নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না।  (সূরা বাক্বারাহ ২৭৮ ২৭৯ আয়াত)

তাই যদি আপনি একজন প্রকৃত মুসলমান হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সব ধরনের সুদি কারবার থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখতে হবে। বর্তমানে সামাজিক ব্যবস্থায় এমনভাবে সুদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে যে, থেকে বেঁচে থাকা বড়ই দুষ্কর দুঃসহ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া কি জায়েজ কি

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া কি জায়েজ কি না? সেই বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। ইতিমধ্যেই উপরে ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি না? তা উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণ যে সকল ব্যাংক রয়েছে এই ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া সম্পূর্ণ রূপে হারাম। 

যদিও অনেকেই ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে থাকে, তবে এ কথা মনে প্রানে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করা সম্পূর্ণ রূপে হারাম। তবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। হালালভাবে ঋণ গ্রহণ করার যে সকল উপায় রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে। তাই বিস্তারিত জানতে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো পড়তে থাকুন।
নিম্ন বর্ণিত শর্তগুলো পূরণ করা সাপেক্ষে যদি কোন ব্যাংক আপনাকে ঋণ দেয়, তাহলে আপনি তা গ্রহণ করতে পারেন। মূলত, ইসলামী রীতিতে লোন হয় না বরং পণ্য ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি যে পণ্য ক্রয় করতে চান, তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে বিক্রি করবে। যাই হোক, বৈধ পদ্ধতিতে এ ঋণ নেওয়ার শর্তগুলো হলো:
  • পন্য সম্পূর্ণরূপে ব্যাংকের মালিকানায় আসতে হবে, এর পরে তা গ্রহীতার নিকটে বিক্রি করতে হবে।
  • ব্যাংক কর্তৃক ভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে বিক্রি করতে হবে, অর্থাৎ ঋণ গ্রহীতার নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করে তার নিকটেই আবার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।
  • গ্রাহকের প্রকৃত অর্থেই সেই পণ্যের চাহিদা থাকতে হবে, অর্থাৎ পূর্বপরিকল্পিতভাবে এমন কোন নেগোসিয়েশন থাকা যাবে না যে, পণ্য ক্রয় করে আবার তা বিক্রি করে অর্থ গ্রহণ করবে।
  • ব্যাংক কর্তৃক বিক্রিত পণ্য হালাল হতে হবে।

ব্যাংকের সুদ ও রিবা কি এক জিনিস

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত রিবা এবং বর্তমান ব্যাংকের সুদ সম্পন্ন এক অভিন্ন। এতদুভয়ের মাঝে কোন ধরনের কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি ব্যাংকের সুদ এবং লিভার মধ্যে পার্থক্য করতে চায়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে ইসলামে বর্ণিত হারাম সুদের ব্যাপারে তার ধারণা নেই। 

ঋণ প্রদান করে তার থেকে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করাই সুদ। সুদপ্রসঙ্গে উবায়েদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, "কোন কর্জ হতে কোন ফায়দা নিলে ঐ ফায়দা এক ধরনের রিবা।" 

বর্তমান ব্যাংকিং সিস্টেম ঋণ প্রদান করে নির্দিষ্ট হলে সুদ গ্রহণ করে, তাহলে কি করে কুরআনে বর্ণিত সেই সুদ থেকে বর্তমান ব্যাংকিং সিস্টেমের সুদ আলাদা হতে পারে? সুতরাং এ কথা, স্পষ্ট যে বর্তমান ব্যাংকিং সিস্টেমের সুদ এবং কুরআনে বর্ণিতির মধ্যে কোন ধরনের পার্থক্য নেই। 

ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে লভ্যাংশ খাওয়া কি হালাল হবে

উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়া যাবে কি না? ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে লভ্যাংশ গ্রহণ করা যাবে কিনা সেই বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। 

ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে এর লভ্যাংশ গ্রহণ করা হালাল হবে কিনা, সেই বিষয়ে সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মাঝে বিস্তর মতপার্থক্য বিদ্যমান। কোন কোন ওলামায়ে কেরামের মতে, ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে তার লভ্যাংশ গ্রহণ করা যাবে। 

তাদের মতামত হলো যেহেতু ইসলামী ব্যাংকের সরিয়া বোর্ড রয়েছে, এবং তারা যেহেতু এই বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় গবেষণা করে। তাই তাদের উপরে আস্থা রেখে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক, প্রদানকৃত লভ্যাংশ খাওয়া যেতে পারে। 
পক্ষান্তরে আরেক দল ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে বাংলাদেশের শতভাগ ইসলামী কোন ব্যাংক নেই। যেহেতু বাংলাদেশের কোন ব্যাংক ওই শতভাগ ইসলামের নিয়ম কানুন অনুসারে পরিচালিত হয় না তাই, ইসলামী ব্যাংকের টাকা রেখে ধ্বংস গ্রহণ করা যাবে না তার লভ্যাংশ গ্রহণ করা যাবে না। 

ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে তার লভ্যাংশ গ্রহণ করার বিষয়টি যেহেতু সন্দেহপূর্ণ তাই এটা থেকে বেঁচে থাকাই উচিত। তবে আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে চান তাহলে ফতোয়া প্রদান করে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফতোয়া নিতে পারেন। ১৬৪১৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url