সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে

সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা তা কি আপনি জানেন না? কিন্তু জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আজ এই পোস্ট এ আমি সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা তা বিস্তারিত জানাবো। তাহলে সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ইসলামে সহবাসের পর গোসল করা ফরজ কাজ। যদিও সহবাস করার পর আপনার বীর্য পাত হোক না হোক। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা তার সঠিক তথ্য।

সূচিপত্রঃ সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে

যে সময় গোসল ফরয হয়ে যায়

  • যখন স্বামী স্ত্রী মিলামেশা করে তখন যদি বীর্যপাত নাও হয় তখন দুজনেরই উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়।
  • সহবাস করার পর যদি একজন পুরুষ এর বীর্য পাত হয়ে গেলেও প্রস্রাব করার সময় যদি বীর্য এর মত কিছু বের হয় কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না যে এটা বীর্য কিনা তাহলেও গোসল ওয়াজিব হয়ে যাবে।
  • ঘুমের সময় যদি একজন মানুষের অসাবধানতাবশত বীর্যপাত হয়ে যায়।

এমন সময় যখন গোসল ফরয হয় না

  • যদি কেউ সন্দেহ করে যে তার পুরুষাঙ্গ নারীর যোনিপথ পর্যন্ত প্রবেশ করেছে কি না তাহলে উভয় পক্ষের উপর গোসল ওয়াজিব হবে না।
  • বীর্যপাতের আগে ও পর যে আটালো তরল বের হয় তাকে ওয়াজি বলে এটা পরিষ্কার। মাঝে মাঝে প্রস্রাবের পর যে তরল বের হয় তাকে ওয়াদী বলা হয় তাও পরিষ্কার এবং এর কোনোটিতেই গোসলের প্রয়োজন হয় না।
  • যদি কেউ একবার সহবাসে লিপ্ত হয় এবং এক রাতে আরও একবার বা দুবার সহবাস করতে চায় তবে প্রতিবার কাজের পরে গোসল ওয়াজিব নয়। ভোরে ফরজ গোসল করে নামাজ পড়লেই হবে।
  • যদি কারো ঘুমের মধ্যে বীর্যপাত হয়ে থাকে এবং যৌন মিলনে লিপ্ত হতে চায় তবে তার জন্য প্রথমে গোসল করার দরকার নাই এবং সহবাস করে গোসল করলেই হবে। তবে এই অবস্থায় সহবাস করা মুকরুহ।

সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে

ইসলাম আমাদের সবসময় পবিত্র থাকার কথা বলে। যে কারণেই হোক না কেন যদি আপনি অপবিত্র হোন তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। কিন্তু অনেক সময় অপবিত্র থাকলেও গোসল করার বা পবিত্রতা অর্জন করা একটু সমস্যা হয়। তাহলে এখানে জানার বিষয় হল সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা।
একটা হাদীসে পাওয়া যায় সহবাসের পর গোসল না করেও গোপনাঙ্গ ধুয়ে নিয়ে শুধু অজু করে কিছু কিছু কাজ করা যায়। যেমন রান্না, খাওয়া দাওয়া ও ঘরের ছোট ছোট কাজ। কিন্তু এটা প্রতিদিন করা বা এটা অভ্যাস করে নেওয়া ঠিক নয়। কারণ মুমিন ব্যক্তিরা সবসময় পবিত্র থাকে। কিন্তু সহবাসের পর গোসল না করে এসব কাজ করা গেলেও নামাজ, কোরআন মাজিদ পড়া বা আল্লাহর ইবাদাত করা যাবে না।

অন্য একটা হাদীসে এসেছে সহবাসের পর গোসল না করে ঘরের দৈনন্দিক কাজ করা যাবে কিন্তু এটা করা অপছন্দনীয় কারণ ইসলাম পরিষ্কার থাকা পছন্দ করে না। সহবাসের পর যদি আপনার খাওয়ার বা ঘুমানোর ইচ্ছা করে তাহলে নামাজের মত অজু করে তা করা যাবে। আয়েশা রাঃ থেকে এসেছে এই হাদীস।

যদিও এখান থেকে সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় কিন্তু সহবাসের পর গোসল করার আলিসে বা সহবাসের পর গোসল না করার ফলে কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে আপনাকে পাপী হতে হবে বা আপনার গুনাহ হবে। তাই সহবাসের পর গোসল না করে অন্য কাজ করলেও নামাজ কাজা করা যাবে না।

গোসলের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম

আমরা প্রতিদিন যে গোসল করি তার একটা সুন্নতি নিয়ম আছে যা অনেকেই জানেন এবং মানেন। কিন্তু যারা জানেন না যে গোসল করার আগে কিছু নিয়ম আছে যা মহানবী সাঃ করে গেছেন তাদের জন্য নিচে গোসলের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম জানাবোঃ
  • প্রথমে গোসলের নিয়ত করতে হবে, তারপর মাথা, ঘাড় এবং তারপর শরীর ধৌত করতে হবে। প্রথমে ডান পাশ তারপর বাম পাশ ধোয়া ভালো। মাথার আগে শরীর ধোয়া যাবে না।
  • ঘাড় ধোয়ার সময় শরীরের ডান দিকটাও একটু ধুলে কিছু হবে না।
  • যদি শরীরের কোন অংশ নাপাক হয় তবে প্রথমে এটি পরিষ্কার করা এবং তারপর গোসল করা আবশ্যক নয় কারণ গোসল করার সময় সবই পরিষ্কার হয়ে যায়।
  • গোসল করার সময় যদি শরীরের কোন অংশ শুকনো থাকে তাহলে গোসল নাজায়েজ হয়।
  • মাথা ও ঘাড় ধৌত করার পর যদি কেউ প্রস্রাব বা পায়খানা করে তাহলে তাদের জন্য আবার ফিরে এসে সরাসরি গোসল করা যাবে এর জন্য আবার গোসল শুরু করা আবশ্যক নয়।
  • যদি কেউ গোসল করার সময় প্রস্রাব করে বা বাতাস ত্যাগ করে তবে গোসল শুরু থেকে করার দরকার নয়। যাইহোক যদি কেউ এই অজুতে নামায পড়তে চায় তবে নামাজ হবে না আপনাকে আবার অজু করতে হবে। কারণ আপনি গোসলের মধ্যে প্রস্রাব করেছেন।
  • গোসল করার সময় যদি অজু করা হয় তাহলে নামাজের জন্য উযূ করা উচিত নয়। এটা সকল ফরয গোসলের ক্ষেত্রে। 

যে সময়ে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যায়

উপরে আমরা সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে তা জানিয়েছি। তবে যখন গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হয় তখন ছয়টি শর্ত রয়েছে যার মধ্যে নিচের শর্ত গুলো বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্যঃ
  • যখন গোসল করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া সম্ভব না হয়
  • যদি কেউ জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করে তবে তারপর ও গোসলের জন্য পানি সংগ্রহের জন্য যেটুকু হয় চেষ্টা করা উচিত যতক্ষণ না সমস্ত আশা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যায়।
  • অতএব কেউ যদি নামাযের জন্য গোসল করতে চায় এবং তখন তার কাছে পানি নেই। তবে সে যদি জানে যে নামাজ হওয়ার আগে পানি পাওয়া যাবে তাকে অবশ্যই পানি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যাতে গোসল করা যায়। নামাযের সময় হয়ে গেলেও পানি আসা পর্যন্ত থামতে হবে। তবে সে যদি জানে যে পানি পাওয়া যাবেই না তাহলে তায়াম্মুম করা যাবে।
  • নামাজের আগে পানি পাওয়া যাবে এমন আশার একটু ঝিলিক থাকলেও নামাজের কাযা হওয়ার আগে পানি পাওয়া যাবে না বলে আশা হারিয়ে ফেলা পর্যন্ত কেউ নামাজের জন্য তায়াম্মুম করতে পারবে না।
  • যাইহোক যদি কেউ পুরোপুরি নিশ্চিত হন যে নামাজ কাযা হওয়ার আগে পানি পাওয়া যাবে না তাহলে একজন তায়াম্মুম করতে পারে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নামায পড়তে পারে।

সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে - শেষ কথা

ইসলাম হল পবিত্র ধর্ম তাই মুমিন ব্যক্তিদেরকেও পরিষ্কার ও পবিত্র থাকার কথা বলা হয়েছে। আপনি যদি অপবিত্র অবস্তায় মারা যান তাহলে জাহান্নামে যাবেন তাই যখনই মনে হবে যে আপনি অপরিষ্কার আছেন, আপনার গোসলের প্রয়োজন তখনই দেরি না করে বা আলসেমি না করে গোসল করে নেওয়া উচিত। 

যেমন অনেক মানুষ আছে বিশেষ করে মেয়েরা সহবাসের পর অলসতার কারণে গোসল করেনা। এই অবস্থায় আপনি অন্য ঘরের কাজ করতে পারলেও নামাজ, কোরআন ও আল্লাহর ইবাদাত করেতে পারবেন না। যা আমরা উপরে আলোচিত সহবাসের পর গোসল ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যাবে কিনা তা থেকে ভালোভাবে জানতে পারি। ২২৪৯৮

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url