চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না

চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না আপনি কি জানেন? চোখ উঠলে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চললে তাড়াতাড়ি আরাম পাওয়া যায়। চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না আমাদের সবার যেনে রাখা উচিত। তাই আপনাদের জন্য আজ আমরা এই পোস্টে চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না তা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

চোখ আমাদের শরীরের এমন একটি অঙ্গ যার মাধ্যমে অনেক ধরণের অসুখ জানা যায়। সাধারণত চোখ লাল হয়ে গেলে, চোখ দিয়ে পানি পড়লে এবং ব্যথা হলে আমরা চোখ উঠা বলি। চোখ উঠা হল চোখের একটি সাধারণ সংক্রমণ যা চোখে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি অ্যালার্জেন, বিরক্তিকর, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস এর মাধ্যমে হতে পারে। নিচে চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না তা দেখুন।

সূচিপত্রঃ চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না

চোখ উঠার লক্ষণ গুলো কি কি?

চোখ উঠার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • আপনার চোখের সাদা বা ভিতরের চোখের পাতায় লালচেভাব
  • বিশেষ করে ঘুমের পরে চোখের পাতার ওপর সাদা বা ঘন হলুদ স্রাব বের হয়ে চোখের দুই পাতা লেগে যায়
  • এক বা উভয় চোখেই খুব ব্যথা হওয়া
  • চোখে চুলকানি হওয়া বিশেষ করে অ্যালার্জির কারণে চোখ উঠলে
  • জ্বলন্ত চোখ অনুভব করা
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • বেশি আলো চোখে লাগলে ব্যথা হওয়া
  • চোখের পাতা ফুলে যাওয়া
  • চোখ দিয়ে পানি পড়া

চোখ উঠলে যা যা করা উচিত

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করতে হবে কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। শুধু বাহ্যিকভাবে নয় আপনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ালে আপনার শরীরকে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারেন। প্রচুর পানি, স্ট্রেস রিলিফ, ব্যায়াম এবং একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং আপনার শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে আরও ভালোভাবে লড়াই করতে সাহায্য করে।
আপনার চোখ ধুয়ে ফেলুনঃ যদি আপনার চোখ অ্যালার্জির কারণে উঠে তখন আপনার শরীর হিস্টামিন নামক রাসায়নিক নির্গত করে যার ফলে চোখে লালভাব, পানি পড়া এবং চুলকানি হয়। তখন আপনি ঘন ঘন পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। এখান থেকে আমরা চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না তা জানতে পারি।

এছাড়াও আরো কিছু কাজ চোখ উঠলে করা উচিতঃ
  • ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন তোয়ালে, রুমাল, জামাকাপড় ইত্যাদি আলাদাভাবে ধুতে হবে এবং অন্য লোকেদের ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • ঠান্ডা এবং উষ্ণ পানি দিয়ে সেঁক দিতে হবে - যদি সংক্রামক থেকে হয় তাহলে উষ্ণ পানির সেঁক আর যদি অ্যালার্জির কারণে হয় তাহলে ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে।
  • ধূমপায়ী ঘর, ধুলোবালি বা চোখ জ্বালা করে এমন কিছু থেকে দূরে থাকতে হবে
  • ভিটামিন সি এর পাশাপাশি অন্যান্য ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে।

চোখ উঠলে যা যা করা উচিত না

চোখে স্পর্শ করা যাবে নাঃ চোখ উঠলে চোখে হাত দেওয়া যাবে না বা ঘষা কারণ হাতে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু থাকে আর চোখে হাত দিলে সেই জীবাণু চোখে গিয়ে আরো বেশী খারাপ অবস্থা হয়। তাই চোখ উঠলে চোখে হাত দেওয়া উচিত না। এ জন্যই চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না তা আমাদের সবার জানা দরকার। আর চোখে যদি হাত দিতে হয় তাহলে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  • ঘুমানোর সময় আক্রান্ত চোখগুলিকে কখনই চোখের প্যাড দিয়ে ঢেকে দেবেন না কারণ এটা আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে। এর পরিবর্তে গাঢ় চশমা ব্যবহার করা উচিত।
  • চোখের মাস্কারা বা চোখের অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। চোখ সংক্রামিত হয় এবং মাস্কারার মতো চোখের প্রসাধনী সমস্যাটিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
  • চোখে অন্য কারো আইড্রপ ব্যবহার করবেন না।

কেন চোখ উঠা রোগ হয়?

চোখ উঠা রোগটি হয় যখন আপনার চোখের আবরণের ঝিল্লির রক্তনালীগুলি বা কনজাংটিভ স্ফীত হয় যা এগুলোকে আরও লাল করে তোলে। উপরে আমরা চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না তা আলোচনা করেছি। এখন আমরা চোখ উঠা রোগ কেন হয়ঃ
  • একটি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ এর ফলে চোখ উঠতে পারে। এটি সংক্রামক চোখ উঠা নামে পরিচিত।
  • পরাগ বা ধূলিকণার মতো পদার্থের জন্য অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় চোখ উঠতে পারে। এটি অ্যালার্জিক চোখ উঠা নামে পরিচিত।
  • চোখ এমন কিছুর সংস্পর্শে আসা যা চোখের কনজাংটিভাকে জ্বালাতন করতে পারে যেমন শ্যাম্পু বা ক্লোরিনযুক্ত জল। এটি বিরক্তিকর চোখ উঠা নামে পরিচিত।

কিভাবে চোখ উঠা রোগের চিকিত্সা করা হয়

চোখ উঠার জন্য সাধারণত চিকিত্সার প্রয়োজন হয় না কারণ রোগটি প্রায়শই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। চিকিত্সার প্রয়োজন হলে এর কারণের উপর নির্ভর করবে। যেহেতু চোখ উঠলে আমরা জানতে পারিনা এটা কোন ধরনের তাই আপনার চোখ লাল এবং জ্বালা হলে সবার আগে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
ব্যাকটেরিয়াল চোখ উঠা সাধারণত প্রেসক্রিপশন অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা মলম দিয়ে চিকিত্সা করা হয়। এটা ব্যবহার করলে দুই একদিনের মধ্যে ভালো বোধ হয় কিন্তু ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না কারণ বন্ধ করে দিলে আবার সমস্যা হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ভাইরাল চোখ উঠার জন্য সাহায্য করবে না।

যদিও চোখের সংক্রমণ নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায় কারণ শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে তবে সংক্রামিত চোখের উপরে রাখা ঠান্ডা কাপড়ের সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়। প্রিজারভেটিভ-মুক্ত কৃত্রিম টিয়ার আইড্রপ এবং অ্যান্টিহিস্টামিন আইড্রপগুলিও চোখ উঠা রোগ ভালো করতে পারে। সংক্রামিত চোখটি নিয়মিত গরম পানি এবং তাজা, পরিষ্কার গজ বা তুলা দিয়ে সাবধানে পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ।
 
এছাড়াও আপনার হাত পরিষ্কার রাখতে হবে প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের কাছে যান। আর অ্যালার্জির কারণে চোখ উঠলে সাধারণত অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে। আপনার অ্যালার্জি আছে এমন খাবার বা উপাদান এড়ানো উচিত। আবার চোখ উঠা ভালো না হওয়া পর্যন্ত কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়। চিকিৎসার পাশাপাশি চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না তা জেনে সেই নিয়ম মেনে চললে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

চোখ উঠা কি অন্ধত্বের কারণ হতে পারে

যদিও চোখ উঠা বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর হতে পারে কিন্তু সমস্যাটি নিজে থেকেই বিপজ্জনক নয় এবং চোখ উঠা অনেক ক্ষেত্রে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিত্সা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তবে যদি চোখে খুব ব্যথা, আলোতে ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, জ্বর, ফুসকুড়ি, ক্রমাগত মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা চোখের স্রাব আরও খারাপ দিকে যায় তাহলে আপনার চোখের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
এই লক্ষণগুলি চোখের আরো খারাপ অবস্থা জানান দেয়। যদি আমরা চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না এসব মেনে চলি তাহলে খুব তাড়াতাড়ি চোখ উঠা ভালো হতে পারে। যদি চোখ উঠা ভালো করার জন্য সব নিয়ম মেনে চলা হয় তাহলে এই রোগ অন্ধত্বের কারণ নাও হতে পারে। 

চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না - শেষ কথা

আপনি যদি জানেন যে আপনার চোখ উঠা কোন কারণে হয়েছে তাহলে এর চিকিৎসা করা খুব সহজ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না এগুলো মেনে চললেই চিকিৎসা না করেও ভালো করা যায়। চোখ উঠলে বাহিরে যাওয়ার সময় চশমা পরে জেতে হবে কারণ বেশি আলো চোখের ক্ষতি করতে পারে। রোগটি ছোঁয়াচে তাই যতটা সম্ভব একা একা থাকতে হবে। আর খুব বেশি খারাপ দিকে গেলে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে। উপরে আমরা চোখ উঠলে যা যা করা উচিত ও যা যা করা উচিত না তা আলোচনা করেছি।[জব আইডি=২২৪৯৮]

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url