শরীরে রক্ত হয় কি খেলে - কোন সবজি খেলে রক্ত হয়
শরীরে রক্ত হয় কি খেলে বা কোন সবজি খেলে রক্ত হয় তা জেনে যাদের এই সমস্যা আছে সেই খাবার গুলো খাওয়া উচিত। কিন্তু ভাবছেন কিভাবে জানবেন শরীরে রক্ত হয় কি খেলে ও কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়? ভাবার কিছু নাই আজ শরীরে রক্ত হয় কি খেলে বা শরীরে রক্ত বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে জানাবো।
আপনার শরীরে রক্তের সংখ্যা কম থাকে যখন আপনার লাল রক্ত কণিকা কমে যায়। একটি মানবদেহ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লাল রক্ত কণিকা উৎপন্ন করে কিছু খাবারের খেলে। আপনি যদি ক্লান্ত বোধ করেন এবং যদি মনে হয় রক্তের সংখ্যা কম থাকার কারণে এমন হচ্ছে তাহলে শরীরে রক্তের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য খাবার খাওয়া উচিত। এই পোস্ট থেকে আপনারা শরীরে রক্ত হয় কি খেলে ও কোন সবজি খেলে রক্ত হয় তার বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
সূচিপত্রঃ শরীরে রক্ত হয় কি খেলে
- শরীরে রক্ত সঞ্চালন বা চলাচল ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন
- শরীরে রক্ত হয় কি খেলে
- আয়রনের ঘাটতি এবং রক্তশূন্যতা
- যে খাবারগুলি রক্তের পরিমাণ এবং সঞ্চালন দুইটাই বাড়ায়
- আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কিভাবে কাজ করে?
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কত হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন?
- শেষ কথা
শরীরে রক্ত সঞ্চালন বা চলাচল ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন
রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা শরীরের সব কোষে পুষ্টি এবং অক্সিজেন পাঠাতে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তের গড় পরিমাণ সাধারণত শরীরের মোট ওজনের ১২ ভাগের ১ ভাগের এর সমান। উদাহরণস্বরূপ যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক কারো ওজন ৬০ কেজি হয় তাহলে তাদের শরীরে প্রায় ৫ লিটার রক্ত থাকতে হবে। রক্তে প্লাজমা, লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লেটলেট সহ প্রধান কিছু উপাদান থাকে। কিন্তু শরীরে রক্ত হয় কি খেলে বা কোন সবজি খেলে রক্ত হয় তা আমাদের জানতে হবে।
রক্ত তৈরি হওয়ার জন্য আয়রন একটি খুব প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে ধরা হয়। শরীরে সাধারণত ৪০-৫০ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। আয়রন হিমোগ্লোবিন আকারে লোহিত রক্তকণিকায় পাওয়া যায় এবং যকৃত এবং প্লীহায় গিয়ে জমা হয়। রক্তে এগুলা কমে যাওয়া হল শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষণ। এরিথ্রোপয়েসিস নামের এক প্রকার লোহিত রক্তকণিকা অস্থি মজ্জাতে এরিথ্রোপয়েটিন হরমোনের নিয়ন্ত্রণে তৈরি হয়। এই লোহিত রক্তকণিকা প্রায় ১২০ দিন বেঁচে থাকতে পারে এবং ফুসফুস থেকে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহণ করে।
আরো পড়ুনঃ মহিলাদের ডান চোখ লাফালে কি হয়
আমাদের লোহিত রক্তকণিকা ১২০ দিন পর লিভার এবং প্লীহাতে ম্যাক্রোফেজ দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে আবার নতুন করে আয়রনের মাধ্যমে লোহিত রক্তকণিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। লোহিত রক্ত কণিকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হল আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি১২। কিন্তু যাদের এই স্বাভাবিক কাজ হই না তাদের শরীরে রক্ত বৃদ্ধির ঔষধ খেতে হয়। অথবা কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে ও কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয় তা জেনে নিয়ে খেতে হবে।
শরীরে রক্ত হয় কি খেলে
লাল মাংসঃ লাল মাংস একটি চমৎকার খাবার যা শরীরে রক্ত তৈরি করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। আমাদের রক্ত লাল মাংস থেকে আয়রন খুব দ্রুত টেনে নেয় এবং এই ধরনের আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তস্বল্পতা দূর করা যায়। লাল মাংসের মধ্যে রয়েছে গরুর মাংস, মুরগি, লিভার হল সেরা লাল মাংসের উৎস।
ডিমের কুসুমঃ কম বেশি সবাই ডিম পছন্দ করে তাই না? অন্যান্য অনেক উপকারিতা ছাড়াও ডিম রক্তের পরিমাণ বাড়াতেও সাহায্য করে। এতে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
মটরশুটিঃ মটরশুটি এবং মসুর ডাল খেলেও শরীরে রক্ত হয়। এগুলো একসঙ্গে নতুন রক্তকণিকা তৈরি ও উৎপাদনে সাহায্য করে। শরীরে রক্ত হয় কি খেলে এই প্রশ্নের এটা একটা ভালো উত্তর।
দুগ্ধজাত খাবারঃ দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ এবং পনির শরীরে রক্ত তৈরিতে অনেক সাহায্য করতে পারে। সয়া এবং বাদাম দুধ রক্ত বাড়াতে গরুর দুধের চেয়ে ভাল কাজ করে। এটি হার্টকে সুস্থ রাখে এবং রক্তের মাত্রা ঠিক রাখে।
আরো পড়ুনঃ দাঁতের শিরশিরানি দূর করার উপায়
চেরি ফলঃ লাল চেরি ফল ভিটামিন সি যুক্ত এবং ভিটামিন সি শরীরে রক্তের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষণ দেখলেই এই খাবার গুলো খেতে হবে।
মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলু আয়রন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ দিয়ে ভরপুর থাকে। এটি সাদা এবং লোহিত রক্তকণিকা উভয়ই তৈরিতে সাহায্য করে। আপনি যদি সহজে পাওয়া যায় এবং সুস্বাদু আবার খেলে শরীরে রক্ত হয় তাহলে মিষ্টি আলু আপনার জন্য খুব ভালো খাবার।
গাজরঃ গাজর রক্ত বৃদ্ধির জন্য অন্যতম সেরা খাবার। নিয়মিত গাজর খেলে শরীরে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বাড়াতে সাহায্য করে। গাজরের রস খেলে শরীরের রক্তের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। এখান থেকে আমরা শরীরে রক্ত হয় কি খেলে এবং কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে তা জানতে পারি।
আয়রনের ঘাটতি এবং রক্তশূন্যতা
রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের মোট পরিমাণ কমে গেলে তাকে অ্যানিমিয়া হিসেবে জানা যায়। রক্তাল্পতার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি রক্তশূন্যতার সবচেয়ে সাধারণ কারণ এবং শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষণ। প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন না থাকলে শরীরে আয়রনের অভাব হতে পারে যেমন লাল মাংস এবং যকৃত এর মত খাবার।
আরো পড়ুনঃ সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা কোনটি
এছাড়াও কিছু সবজি শরীরে আয়রন বাড়াতে সাহায্য করে। একজন মানুষের শরীরের জন্য কতটুকু আয়রন প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার লিঙ্গ, বয়স, বৃদ্ধি এবং শারীরিক বিকাশ, মাসিকের সময় রক্তের পরিমাণ এর ওপর। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য দিনে প্রায় 10.4 মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য দিনে 9.4 - 24.7 মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন হতে পারে যা খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।
যে খাবারগুলি রক্তের পরিমাণ এবং সঞ্চালন দুইটাই বাড়ায়
- শাকসবজিঃ বিশেষ করে কেল, পালংশাক এবং লেটুস রক্তের পরিমাণ এবং সঞ্চালন বাড়ানোর উভয় কাজ একসাথে করতে পারে।
- বাদাম এবং বীজঃ কুমড়োর বীজ এবং আখরোট রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং সঞ্চালনের জন্য দুর্দান্ত কাজ করে।
- মাছঃ আপনি যখন শরীরে রক্তের পরিমান বৃদ্ধি করতে চান তখন সালমন, ট্রাউট এবং শেলফিশের মতো মাছ খান।
- লাল মরিচঃ লাল মরিচে রয়েছে ক্যাপসাইসিন যা রক্ত তৈরি করে এবং রক্ত প্রবাহকে সহজ করে।
আপনি যদি এই রক্ত তৈরিকারী খাবারগুলি আপনার খাবারে যুক্ত করে নিয়মিত ভাবে খান তাহলে আপনার শরীরে অনেক পরিবর্তন আসবে। এই সব তথ্য ছাড়াও এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার অ্যালকোহল খাওয়া কমাতে হবে। মদ্যপান আপনার রক্তের পরিমাণ কমাতে পারে। এছাড়াও উপরে আমরা খুব ভালোভাবে জেনেছি শরীরে রক্ত হয় কি খেলে ও কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়।
আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কিভাবে কাজ করে?
লোহিত রক্তকণিকার মূল কাজ হল ফুসফুস থেকে শরীরের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন পরিবহন করা। লাল রক্ত কণিকাগুলিতে হিমোগ্লোবিন নামে একটি প্রোটিন থাকে যা জীবিত কোষগুলি ভালভাবে কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য অক্সিজেন বহন করে থাকে। বলা হয় যে ফুসফুস থেকে রক্তের মাধ্যমে যাওয়া অক্সিজেনের ৯৭ শতাংশ হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে যায় এবং বাকি তিন শতাংশ রক্তরস এর মাধ্যমে যায়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কত হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন?
আদর্শভাবে একজন পুরুষের হিমোগ্লোবিন প্রতি ডেসিলিটার এ প্রয়োজন 13.5 থেকে 17.5 গ্রাম এবং মহিলাদের প্রতি ডেসিলিটার এ প্রয়োজন 12.0 থেকে 15.5 গ্রাম হিমোগ্লোবিন যা স্বাভাবিক হিসাবে মনে করা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স এবং লিঙ্গের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
শরীরে রক্ত বেশি হলে কি হয়ঃ শরীরে রক্ত কম হলে যেমন সমস্যা আছে সেরকমই রক্ত বেশি হলেও সমস্যা আছে। শরীরে রক্ত বেশি হলে রক্ত চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হয়। কারণ রক্তে অতিরিক্ত হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে রক্ত জমাট বেঁধে যায় ফলে শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। তাই শরীরে রক্ত হয় কি খেলে বা শরীরে রক্ত বৃদ্ধির ঔষধ সাবধানে খেতে হবে। এখান থেকে আমরা শরীরে রক্ত বেশি হলে কি হয় তা জানতে পারি।
শরীরে রক্ত হয় কি খেলে - শেষ কথা
আপনার যদি মনের শরীরে রক্ত বা হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমের জন্য আপনার শরীর খারাপ করছে তাহলে খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন হল রক্তের সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। রক্ত বাড়ানোর জন্য এই খাবারগুলি খুব কার্যকর এবং এটি আপনাকে আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে বা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। উপরের আলোচনা থেকে আপনারা কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে ও শরীরে রক্ত বেশি হলে কি হয় বিস্তারিত জানতে পারেন। [জব আইডি=২২৪৯৮]
Helpful content ❤️❤️😘