এইডস কত দিন পর ধরা পরে - এইডস হলে করণীয়

এইডস কত দিন পর ধরা পরে? আমরা অনেকেই এই বিষয়টি জানিনা। যেহেতু এটি একটি মরণব্যাধি তাই এ রোগের খুঁটিনাটি বিষয় অর্থাৎ এইডস কত দিন পর ধরা পরে? এর লক্ষণ সহ কারণ জেনে রাখা উচিত। আপনাদের জানার সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে এইডস কত দিন পর ধরা পরে? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে এইডস কত দিন পর ধরা পরে? এ বিষয়ে জানতে পারবেন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এইডস কত দিন পর ধরা পরে? তা জেনে নেওয়া যাক।

কনটেন্ট সূচিপত্রঃ এইডস কত দিন পর ধরা  - এইডস হলে করণীয়

এইডস কত দিন পর ধরা পরে - এইডস হলে করণীয়ঃ ভূমিকা

আমরা যারা হালকা পাতলা পড়াশোনা করেছি সাধারণত তারা সকলেই এইডস সম্পর্কে কমবেশি জানে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো অনেক মানুষ রয়েছে যারা এইডস এক ধরনের মরণব্যাধি এ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। কিন্তু একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের এইডস রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা উচিত। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এইডস কত দিন পর ধরা পরে তা জানতে হবে।

আরো পড়ুনঃ আলসার হলে কি কি খাওয়া যাবে না

এছাড়া আজকের এই আর্টিকেলে এইডস কী? এইডস কিভাবে হয়? এইডস এর উৎপত্তি, এইডস এর লক্ষণ ও কারণ, এইডস কত দিন পর ধরা পরে? এইডস হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এইডস কী

এইডস একটি ভয়ানক ব্যাধি। ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি তথা রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র এই রোগ প্রথম শনাক্ত করে। নিউমোসিস্টিন কারিনি এবং কাপোসি-র সার্কোমা নামে দুটি বিরল রোগের সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেলে CDC সতর্ক হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই মহামারী রোগের ভাইরাস শনাক্ত করেন।

ফরাসি বৈজ্ঞানিকেরা এর নাম দেন লিম্ফাডেনোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস অর্থাত "লসিকাগ্রন্থির রোগ-সংশ্লিষ্ট ভাইরাস" আর মার্কিনীরা এর নাম দেয় Human T-cell Lymphotropic virus, strain III (HTLV III) অর্থাৎ "মানব টি-কোষ লসিকাগ্রন্থি-অভিমুখী ভাইরাস।"

১৯৮৬ সালে এই ভাইরাসের পুনঃনামকরণ করা হয় মানব প্রতিরক্ষা অভাব সৃষ্টিকারী ভাইরাস। এইচ আই ভি ভাইরাস মানুষের শরীরের টি-সহায়ক কোষগুলিকে (T-helper cell) আক্রমণ করে যেগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্যে অতীব প্রয়োজনীয়।

এইডস এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৭ সালের গণনা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৩ কোটি ৩২ লক্ষ মানুষ এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে যাদের মধ্যে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ছিলো শিশু। এর তিন/চতুর্থাংশেরই মৃত্যু ঘটেছে আফ্রিকার সাহারা-নিম্ন ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর অঞ্চলে। আশা করি এইডস কী এ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

এইডস কিভাবে হয় - এইডস এর উৎপত্তি

এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে এইডস কিভাবে হয়? এ বিষয়ে সম্পর্কে জানতে হবে এবং এই মরণব্যাধি কোথায় থেকে এলো এ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে এইডস এর উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। ১৯২০ সালে প্রথম এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে। মূলত কঙ্গো ১৯০৮ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বেলজিয়াম উপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল।

এই সময় প্রতিবছর প্রায় ১০ লোক রেলে কিনসাসায় যাতায়াত করত। বিভিন্ন দেশ থেকে লোকসমাগম এখানে আসত। যার ফলে এখানকার অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন আরো বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের কারণে এইচআইভি ভাইরাস আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেকটা দায়ী।

কারণ আমরা জানি যে একই সুই অর্থাৎ সিরিঞ্জ বার বার অনেক জনের শরীরে প্রবেশ করানোর ফলে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধের সময় একই সিরিঞ্জ বারবার অনেকগুলো আহত সৈনিকদের শরীরে প্রবেশ করানো হয় যার ফলে এইচআইভি ভাইরাস আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এবং আফ্রিকার দেশগুলোর নিরাপদ যৌনপল্লীগুলো এইচআইভি ছড়ানোর অন্যতম কারণ।

১। এইডস বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো অসুরক্ষিত যৌনসঙ্গম। এইচআইভি ভাইরাস কারো শরীরের চুম্বনের দ্বারা অথবা যৌন মিলন করার সময় বীর্য নারীদের যৌনাঙ্গের ভেতরে ফেলে দেওয়ার ফলে হয়ে থাকে।

২। মায়ের দ্বারা অনেক সময় সন্তানের এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। যদি কোন মা এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং সেই মায়ের দুধ কোন বাচ্চা খেয়ে থাকে তাহলে সেই বাচ্চার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

৩। একই সিরিঞ্জ বারবার ব্যবহার করার ফলে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। যদি একটি সিরিজ একাধিক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং কারো এইচআইভি থাকে তাহলে যাদের নেই তারাও এই সিরিজ ব্যবহার করার ফলে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত হয়।

৪। এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত নেওয়ার ফলে। যদি কখনো কোন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্ত ভালো কোন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাহলে সেই ব্যক্তির এইডস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

এইডস এর লক্ষণ ও কারণ

এইডস হলো একটি মরণব্যাধি। এখান থেকে বাঁচার জন্য এইডস এর লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। মানুষের শরীরে যদি এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণ করে তাহলে তাদের এই ধরনের রোগ হয়ে থাকে। যদিও বাংলাদেশে এ রোগের আক্রমণের সংখ্যা অনেক কম তবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই আমাদের এইডস এর লক্ষণ ও কারণ জেনে রাখা জরুরী।

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার যোগ্যতা

এইডস রোগের কারণ গুলোর মধ্যে আমরা প্রথমেই বিবেচনা করি ও নিরাপদ যৌন সম্পর্ক। এইচআইভি বাহক বা এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে যদি অনিরপদ যৌন সম্পর্ক করা হয় তাহলে তার মধ্যে থাকা এইচআইভি ভাইরাস অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করবে। এটি হলো এইডস রোগ হওয়ার অন্যতম কারণ।

এছাড়া অনিরাপদ রক্ত যদি শরীরে সঞ্চালিত হয় তাহলে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে। যদি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির রক্ত। ভালো কোন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাহলে ওই ব্যক্তির এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সাধারণত অতিরিক্ত পরিমাণে মাদকদ্রব্য সেবন করার ফলে ও এটি হতে পারে।

এইচআইভি রোগে আক্রান্ত কোন মায়ের বাচ্চার এইডস রোগ হতে পারে। একটি সিরিঞ্জ যদি বারবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাহলে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একটি ব্লেড দিয়ে যদি অনেকগুলো ব্যক্তির দাড়ি সেভ করা হয় তাহলে এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১। ঘন ঘন জ্বর হওয়া এর সাথে গলা অস্বাভাবিক ব্যথা করা। খাবার খাওয়ার সময় সেগুলো গিলতে অনেক সমস্যা হওয়া।

২। ঘুমের মধ্যে ঘাম হওয়া। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুকনো কাশি হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়।

৩। অল্পতেই বমি বমি ভাব হওয়া অনেক সময় বমি হওয়া। পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেওয়া।

৪। ক্লান্তি হওয়া এবং মাথাব্যথা করা। একটুতেই শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। সব সময় অলসতা বোধ করা। একটু হাঁটলেই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া।

৫। লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। লসিকা গ্রন্থি হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের হাত থেকে রক্তকে রক্ষা করে।

৬। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথা করা এবং ত্বকে পুস করি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই ফুসকুড়ি গুলো চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এইডস কত দিন পর ধরা পরে

একজন মানুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণের ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে কিছু কিছু প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে শুরু করে। ব্যাক্তি ভেদে লক্ষণগুলো আলাদা হতে পারে। অনেক ব্যক্তির ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় অসুস্থতা প্রকাশের দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে বেড়ে যায় যখন অন্য কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ থাকে।

প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গলা ব্যথা করা, ফুসকুড়ি ওঠা, মাথা ব্যথা হওয়া, শরীর সবসময় ক্লান্ত হয়ে থাকা। এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এইচআইভি আক্রমণ করার পরে ধীরে ধীরে এ রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথমে এর ছোট ছোট লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় এরপরে যেগুলো লক্ষণ বড় এবং মারাত্মক সেগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।

এইডস হলে করণীয়

এইডস হলে করণীয় জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। যেহেতু এটি মরণব্যাধি তাই যদি কখনো ভুলবশত আমাদের এই রোগ হয়ে যায় তাহলে প্রথম অবস্থাতে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে এবং এইডস হলে করণীয় রয়েছে সেগুলো মেনে চলতে হবে।

১। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানো যাবে না। যদি অতীতে এ ধরনের কোন কাজ করে থাকেন যার ফলে আপনার এই ধরনের অসুখ হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করা যাবে না।

২। অবশ্যই যৌন মিলন করার সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন অন্য কোন যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৩। এইচআইভি প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা সচেতন। অবশ্যই আমাদের এই রোগ সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে আমরা এখান থেকে মুক্তি পেতে পারবো।

৪। যারা শরীরে ইনজেকশন নেন সাধারণত বারবার একই ইনজেকশন নেওয়ার ফলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন তাই অন্যের ব্যবহৃত ইনজেকশন কখনোই ব্যবহার করবেন না।

৫। অবশ্যই শরীরের রক্ত বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গ্রহণের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে সে রক্ত বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে কিনা।

৬। এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে তাই চেষ্টা করতে হবে মায়ের প্রয়োজনীয় থেরাপি দেওয়ার।

এইডস কত দিন পর ধরা পরে - এইডস হলে করণীয়ঃ উপসংহার

এইডস হলে করণীয়, এইডস এর লক্ষণ ও কারণ, এইডস কী? এইডস কত দিন পর ধরা পরে? এইডস এর উৎপত্তি, এইডস কিভাবে হয়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।

আরো পড়ুনঃবাচ্চাদের হাত পা কাপে কেন - হাত কাপে কেন

আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন তথ্যমূলক আর্টিকেলের সাথে। সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন ধন্যবাদ। ২০৮৭৬

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url