কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে

আপনারা কি বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে এবং কোরআন তেলাওয়াত না করার শাস্তি সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই কোরআন মাজীদ তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত বা কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে পোস্টটি আপনাদের জন্য। আজকে আমরা কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে, তাজবীদ সহ কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।
তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই, কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে এবং মাখরাজ অনুযায়ী তেলাওয়াত না করার পরিণতি কি হবে বা শুদ্ধভাবে কুরআন পাঠের রীতিকে কী বলে সে সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে

বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে

আমাদের জীবন বিধান হচ্ছে পবিত্র কোরআন। বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে সেই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, কোরআন এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ কিতাব সমূ্হ, যার অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে নামাজ হবে না। সুরা ফাতেহার সাথে সর্বনিম্ন পাঁচটা সূরা ভালোভাবে মুখস্ত রাখতে হয় নামাজিদের। কোরআনের অর্থ বুঝে না পড়লেও প্রত্যেকটা হরফের জন্য দশটা করে নেকি পাওয়া যাবে। যেমন-যদি কেউ শুধুমাত্র আলিফ-লাম-মীম তেলাওয়াত করে, সে ক্ষেত্রে এই তিনটা হরফের বিনিময়ে ত্রিশটা নেকি তার আমলনামায় লেখা হবে।

আমাদের প্রিয় রাসুল সাঃ বলেছেন, নফল ইবাদত গুলোর মধ্যে সবচাইতে উত্তম ইবাদত হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত করা। কোন ব্যক্তি যদি কোরআন পাঠ করে এবং কোরআনে যেগুলো লেখা আছে সেগুলো আমল করে, কেয়ামতের দিন তার পিতামাতাকে এমন একটা টুপি পড়ানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর চাইতে উজ্জ্বল হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং কোরআনের হুকুম অনুসারে আমল করে তার মর্যাদা কেমন হবে? কোরআনের শিক্ষা যে ব্যক্তি লাভ করবে, কোরআন তেলাওয়াত নিয়মিত করবে এবং কোরআন অনুসারে নিজের জীবন গঠন করবে।

আরো পড়ুনঃ মহিলাদের ডান চোখ লাফালে কি হয়

সেই ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করতে পারবে। বেহেস্তের সুসংবাদ তার জন্য রয়েছেন। কেয়ামতের দিন কোরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবেন। তেলাওয়াতকারীর অন্তরের সকল ইচ্ছা আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার আগেই সেটা পূরণ করে দিবেন। যখন কোন বান্দা মনোযোগ সহকারে কোরআন তেলাওয়াত করেন তখন সেই ব্যাক্তি যেন আল্লাহর সাথেই কথা বলেন। শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করলে অন্তরের নাপাকি ও ময়লা দূর হয়ে যায়।

আল্লাহর ভালোবাসা সেই ব্যক্তির জন্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। তেলাওয়াতে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানের দিক দিয়ে ফেরেশতাদের সমান-সম্মানিত হয়। আর কোরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে যে ব্যক্তির মুখ আটকে যায়, উচ্চারণ করা খুব কঠিন মনে করে এবং বারবার ঠেকে যায় তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। তেলাওয়াত করবার জন্য এক গুণ এবং কষ্ট করবার জন্য আরেক গুণ। এছাড়াও কোরআন তেলাওয়াতের উপকারিতা রয়েছে আরো অনেক। অর্থাৎ বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম।

কোরআন তেলাওয়াত না করার শাস্তি

সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান হচ্ছে আল-কোরআন, এবং মানবজাতির সব চাইতে শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক। এটা একটা এমন অমূল্য সম্পদ যা পাঠ করলেও সাওয়াব পাওয়া যায়। যে ব্যাক্তি আল্লাহর কিতাবের একটা হরফ পড়বে সে পাবে একটা নেকি। আর ১০ গুণের সমান হচ্ছে প্রত্যেকটি নেকি। আমরা ' আলিফ লাম মিম' বলে থাকি যা এক একটা হরফ। কিন্তু না, আলিফ হচ্ছে একটা হরফ, লাম হচ্ছে একটা হরফ এবং মিম হচ্ছে একটা হরফ। (তিরমিজিঃ ২৯১০)। পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছেন, ' আপনার প্রতি আমি এই বরকত পূর্ণ কিতাব নাযিল করেছি, এই আয়াতগুলো যেন তারা অনুধাবন করেন এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে' (সূরা সোয়াদঃ ২৯)।

' কুরআন নিয়ে তারা কি চিন্তা করে না? নাকি অন্তঃকরণ তাদের বন্ধ?' (সূরা মুহাম্মদঃ ০৪)। অন্য আয়াতে এসেছেন, আমি কোরআনকে সহজ করেছি উপদেশ গ্রহণ করার জন্য। অর্থাৎ চিন্তা করবে এমন কেউ কি আছে? (সূরা কামারঃ ১৭)। অতএব, উপরক্ত আয়াতসমিলের অর্থ এটা নয় যে, না বুঝিয়ে কোরআন পড়লে সাওয়াব পাবেনা। বরং কোরআন তেলাওয়াত না করার শাস্তি আছে। কোরআন না পড়লে কি হয় কিংবা কোরআন তেলাওয়াত না করার শাস্তির বিষয়ে তুলে ধরবো। কেননা, কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে একটা স্বতন্ত্র ইবাদত। কোরআন না বুঝে পড়লে কোন গুনাহ হবে না।

আরো পড়ুনঃ হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে - হুন্ডি কি

কিন্তু আপনি কুরআন না বুঝে তেলাওয়াত করলে সারা জীবন অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে যার মধ্যে কোরআনের কোন ধরনের অংশ নাই অর্থাৎ কোরআন সম্পর্কে যে ব্যক্তি অজ্ঞ কিংবা কোরআনের শুদ্ধ তেলাওয়াত শিখেনি, সেই ব্যক্তিকে অনবরত পতিত ঘরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কোরআন তেলাওয়াত না করার শাস্তি হচ্ছে অনবরত পতিতা ঘর। যে বিরান ঘরে কিংবা পতিত ভূমি কারো উপকারে কখনো আসে না বরং অন্যের ক্ষতি ও বিপদের কারণ হয়ে থাকে। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত না করার ফলে সাওয়াবের পরিবর্তে আরো গুনাগার হয়ে থাকে

কোরআন মাজীদ তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত

কোরআনের প্রত্যেকটা আয়াতে বিশ্ব মানবতার হেদায়েত এবং মুক্তির বারতা যেরকম রয়েছেন, তেমনি কোরআন মাজীদ তেলাওয়াতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অফুরান সাওয়াব এবং পুরস্কারের ঘোষণা। কোরআন মাজীদ তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে বিশিষ্ট আলেম ড. মাওলানা মুস্তাক আহমদ এর শ্রুতি লিখন বয়ান করেছেন-মিজান বিন রমজান। আল্লাহর সাথে কথা বলার মাধ্যমে কুরআন তেলাওয়াত। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের সম্মানই বেশি আর শ্রম কম।

আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে কালামুল্লাহ বা আল কুরআন দান করেছেন যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার কথা। আল্লাহর সঙ্গে হযরত মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বলতেন কিন্তু সেটা ছিল একটা নির্ধারিত সময়ে। আর এই উম্মতের জন্য আল্লাহর সাথে যখন খুশি তখন কথা বলার সুযোগ রয়েছেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেছেন, যখন আমার আল্লাহর সাথে কথা বলার মন চাইতো, তখন আমি কোরআন তেলাওয়াত করা শুরু করে দিতাম।

তাজবীদ সহ কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব

তাজবীদ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সৌন্দর্যমন্ডিত করা বা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা। যে বিষয়টাতে কোরআন মাজীদকে সঠিকভাবে উচ্চারণে তেলাওয়াতের নিয়ম-কানুন উল্লেখ করা হয়ে থাকে তাকে তাজবিদ বলা হয়। সঠিক উচ্চারণ মাখরাজ এবং সিফাত অনুসারে উচ্চারণের উপরে অধিক নির্ভর করে থাকে। তাজবীদ সহ কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব বা কুরআন তেলাওয়াত করা আবশ্যক বা ওয়াজিব। তাজবীদ সহ উচ্চারণ না করলে অর্থ সাধারণত বিকৃত হয়ে গিয়ে থাকে।তাজবীদ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরআন মাজীদের প্রতিটা হরফকে সঠিকভাবে পাঠ করা।

কোরআন মাজীদের হরফগুলো এবং শব্দ পাশাপাশি আসার কারণে যে সকল কায়দার (ওয়াকফ, ইত্তেকায়ে সাকিনাইন, মাদ্দ, বারিক, পুর, গুন্নাহ) বৃষ্টি হয়ে থাকে তা সঠিকভাবে পাঠ করা, কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত করবার সময় কোন কিছু যেন অতিরিক্ত যুক্ত না হয়, প্রয়োজনীয় কোন কিছু যেন বাদ না পড়ে। কোরআন মাজীদকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট এবং সুন্দর করে পড়া প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরজ। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজে নির্দেশ দিয়েছেন। এই স্পষ্ট এবং সুন্দর করে পড়ার জন্য কিভাবে পড়তে হবে সেটা আগে জানতে হবে এবং সেটা তাজবিদ এই বর্ণনা করা হয়ে থাকে।

সেজন্য তাজবীদ সম্পর্কে ধারণা থাকা লাগবে। তা না হলে কোরআন মাজীদ পড়বার সময়ে বিভিন্ন ধরনের ভুল হবে এবং কুরআনের আয়াতের অনেক সময় অর্থের বিপরীত অর্থ হয়ে যায়। অর্থাৎ কুরআন মাজীদ পড়ার মূল উদ্দেশ্যটাই তখন বিফলে হয়ে যায়। তাছাড়া ও শ্রবণকারী ভুল উচ্চারণ শোনার মাধ্যমে কোরআন মাজীদ সম্পর্কে ভুল ধারণা জাগতে পারে। অনেক সময় যেটা বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে উঠতে পারে যা কখনোই আশা করা যায় না। সেজন্য তাজবীদ সহ কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম।

শুদ্ধভাবে কুরআন পাঠের রীতিকে কী বলে| মাখরাজ অনুযায়ী তেলাওয়াত না করার পরিণতি

প্রতিটা নর-নারীর ওপর কোরআনে কারিম এতোটুকু সহীহ শুদ্ধভাবে পড়া ফরজে আইন, যার মাধ্যমে অর্থের কোন পরিবর্তন হতে পারে না। অর্থের পরিবর্তন হয় এরকম ভুল পর আর মাধ্যমে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য কমপক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ক্ষেত্রে যে সূরা গুলো প্রয়োজন হয় অন্তত সূরা গুলোকে শুদ্ধ করে নেওয়া আবশ্যক। অন্যথায় সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। (মুকাদ্দামায় জাজারিয়াঃ ১১)। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু শুদ্ধভাবে কুরআন পাঠের রীতিকে কী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, সবাই এমন ভাবে কোরআন পড়বে যেভাবে তোমাদেরকে শেখানো হয়েছে। (ফাজায়েলুল কোরআনঃ ৩৬১)।

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার যোগ্যতা

অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাঃ সাহাবায়ে কেরামকে কুরআন শিক্ষা যেভাবে দিয়েছেন এবং পরবর্তী উম্মতকে যেভাবে সাহাবারা শিক্ষা দিয়েছেন আর ওই পরম্পরা যেরকম শুদ্ধভাবে চলে এসেছে, সেভাবেই তোমাদেরকে কোরআন পড়তে হবে। সেজন্য প্রত্যেকটা হরফ স্বীয় মাখরাজ থেকে লাজেমাসহ সিফাতে উচ্চারণ সহকারে মদ গুন্নাহ আদায় করার মাধ্যমে কোরআন পড়তে হবে। নতুবা মাখরাজ অনুযায়ী তেলাওয়াত না করার পরিণতি অনেক গুনাহ হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে এবং অপরকে কোরআন শিক্ষা দিয়ে থাকে। (সুনানে আবু দাউদঃ ১৪৫২)

শেষ কথাঃ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে

কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোষ্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।

আজ আর নয়, কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে কি হবে সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url