হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি

হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? সেই বিষয় সম্পর্কে যদি আপনি দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিচে হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? সেই বিশেষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? আসুন তা জেনে নেই।

পেজ সূচিপত্র: হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি

ভূমিকা

নারীগণ যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন প্রতি মাসে তাদের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে হায়েজ বা মাসিক ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। এই সময় নারীদের শারীরিক এবং মানসিক বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এই সময় নারীদেরকে বিশেষ কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেমন নির্দিষ্ট সেই দিনগুলোতে তাদের জন্য নামাজ সম্পূর্ণরূপে মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। 

অর্থাৎ হায়েজের দিনগুলোতে যে সকল নামাজ আদায় করতে পারেনি তা আর পুনরায় কখনো আদায় করতে হবে না। এবং সাময়িকভাবে রোজাও মওকুফ করা হয়েছে। অর্থাৎ হায়েজের কারণে যদি কেউ রোজা রাখতে না পারে, সে ক্ষেত্রে সেগুলো পড়ে আদায় করে নিতে হবে। 

হায়েজ অবস্থায় নামাজ এবং রোজা করতে হবে না তা তো জানা গেল। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলটি আলোচ্য বিষয় হলো হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? 

তাই আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে চান, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সাথে ধৈর্য সহকারে পড়তে হবে। আশা করা যায়, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। 

হায়েয মানে কি

কোন নারীর গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা বুঝার একমাত্র উপায় হলো মাসিক ঋতুস্রাব। অর্থাৎ যদি কোন মেয়ের মাসিক হয় তখন ধরে নিতে হবে যে সে গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত। মেয়েদের প্রথম মাসিক হওয়ার পর তাদের বেশ কিছু শারীরিক মানসিক পরিবর্তন ঘটে। যাই হোক, এখন প্রশ্ন হল হায়েয বা মাসিক ঋতুস্রাব মানে কি?  

হায়েয মানে হলো: মাসিক ঋতুস্রাব। অর্থাৎ প্রতি মাসে নির্ধারিত সময়ে নারীদের লজ্জাস্থান থেকে রক্তপাত ঘটে, মূলত এই রক্তস্রাবকেই হায়েয বলা হয়ে থাকে। প্রথমে নারীদের ডিম্বাশয় ডিম্বস্ফোটন হয়। এরপরে সেই ডিম্ব ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্য দিয়ে জরায়ুতে প্রবেশ করে। এবং সেখানে তা ৩-৪ দিন অবস্থান করে। 
এর মধ্যে যদি সেই ডিম্ব শুক্রাণুর সংস্পর্শে না আসে সেক্ষেত্রে তা নষ্ট হয়ে যায়। এবং এর ফলে  জরায়ুর অভ্যন্তরে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরে ভেঙে যায়। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সেই ডিম্ব ঝিল্লি সহ রক্তের সাথে যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে। মূলত এই রক্তকেই হায়েয বা মাসিক ঋতুস্রাব হিসেবে গণ্য করা হয়। 

এই চক্র সাধারণত ৩-৪ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণবশত সময় কিছু না কম বেশি হতে পারে। তবে তা যদি অব্যাহতভাবে হতে থাকে অর্থাৎ মাসিক ঋতু চক্রের সময় যদি ১০-১২ দিন বা এর থেকে বেশি হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

কেননা এই ধরনের মাসিক ঋতুস্রাব স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী। অর্থাৎ এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তা রোগ হিসেবে গণ্য হবে। আর এ কারণেই আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অনেকেই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলেন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে চান না। 

আসলে এমনটি করা উচিত নয়। কেননা যে কোন ধরনের রোগের চিকিৎসার যথাসময়ে করা না হলে, তা পরবর্তীতে জটিলাকার ধারণ করতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা নিতে হবে। 

হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি

ইতোমধ্যেই উপরে হায়েজ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। এবার এই আর্টিকেলটির মূল আলোচ্য বিষয় হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।  তাই আপনি যদি হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি? তা জানতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়ে নিতে হবে। 

যেহেতু, হায়েজ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে নিষেধ, সেকারণে অনেকের মনে এই ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক হয়ে থাকে যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? মূলত কোরআন তেলাওয়াত করার সাথে কুরআন তেলাওয়াত শোনার কোন সম্পর্ক নেই। 

হায়েজ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও হায়েজ অবস্থায় কোরআন শোনার ব্যাপারে কারো মত পার্থক্য নেই। অর্থাৎ হায়েজ অবস্থায় অবশ্যই কোরআন শোনা যাবে। এতে কোন সমস্যা নেই। তাই আপনি হায়েজ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পারবেন। 
আরেকটি বিষয় জেনে রাখা উচিত, মাসিক ঋতুস্রাব চলাকালীন অবস্থায় অনেকে ঋতুমতী নারীকে অচ্ছুত মনে করেন। আসলে এমনটি মনে করা সমীচীন নয়। ঋতুমতী নারী স্বাভাবিক নারীদের মতো সবকিছু করতে পারবে এতে কোন সমস্যা নেই। শুধুমাত্র সেই সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যে কাজগুলো ইসলামের শরীয়ত অনুসারী করতে নিষেধ করা হয়েছে। 

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী যে সকল কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে সেই কাজগুলো ব্যতীত অন্যান্য যে কোন কাজ করতে পারবে। তাই অবশ্যই আপনাকে মাসিক ঋতুস্রাব সম্পর্কিত যাবতীয় কুসংস্কার ও ভুল ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন মাসিক ঋতুস্রাব চলাকালীন অবস্থায় অবশ্যই আপনাকে হাইজিন মেইনটেইন করতে হবে। কেননা এই সময় খুব দ্রুত রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনার বিধান

হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনার বিধান সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। কেননা ইতিমধ্যেই উপরে হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কিনা? সেই বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তাই আপনি যদি উপর উল্লিখিত তথ্যগুলো পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই, হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। 

যাইহোক, হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনার বিধান হলো: হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে। এতে কোন সমস্যা নেই তাই আপনি হায়েয অবস্থায় যত খুশি কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পারবেন। হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনার বিধান কি? আশা করি তা জানতে পারলেন। 

শেষ কথা

সমাজে হায়েজ বা মাসিক ঋতুস্রাব সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করে থাকে যে, মাসিক ঋতুস্রাব হলে চুল ধোয়া যাবেনা। মূলত এই কথার কোন ভিত্তি নেই। বরং মাসিক ঋতুস্রাব অবস্থায় আপনাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। মাসিক ঋতুস্রাব সম্পর্কে আরেকটি ভুল ধারণা হলো রান্নাঘরে ঢুকতে মানা করা। 

তাদের ধারণা মতে, ঋতুমতি নারী রান্নাঘরে প্রবেশ করলে রান্নাঘর নাপাক হয়ে যাবে। এবং সে যদি কোন খাবার রান্না করে তাহলে সেই খাবারও নাপাক হয়ে যাবে। আর এ কারণেই ঋতুমতি নারীকে অনেকই রান্নাঘরে প্রবেশ করতে দেয় না। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ও কুসংস্কার। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের বিষয়গুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। 
যাইহোক, হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি না? আশা করি সেই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনার বিধান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনার অনেক ভালো লেগেছে যদিও ভালো লেগে থাকে তাহলে সকলের সাথে শেয়ার করবেন। ১৬৪১৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url