যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম

যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম, সেই দানসমূহ সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। তাই যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম, সে সম্পর্কে যদি আপনি বিস্তারিত তথ্য জানতে চান, তাহলে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম, সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিম্নরূপ।
মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে, নিজের উপার্জিত সম্পদ থেকে কিছু সম্পদ  আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা, গরিব দুঃখীকে প্রদানকরা বা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা কেই দান বলা হয়। পবিত্র কুরআনে এবং হাদিসে দান করার ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য রেওয়ায়েত রয়েছে। 

তাই আপনি যদি প্রকৃত মুসলিম হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আপনার সম্পদের কিছু অংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে হবে। এখন কথা হলো: কোন ধরনের দান আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়। আল্লাহর নিকটে যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম, সে দান সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
  • যাকাত প্রদান করা: যাকাত হলে ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ বিধান। আপনি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাতের মাধ্যমে সমাজের ভারসাম্য রক্ষা পায়। যদি যাকাতের বিধান সঠিকভাবে অনুসরণ না করা হয় তাহলে সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। 
  • সাধারণ সদকা প্রদান করা: যাকাত ছাড়াও ঐচ্ছিক ভাবে দান করার অনেক ফজিলত রয়েছে। আপনি আপনার সম্পর্কে যদি গরিব দুঃখী কে কিছু দান করেন, তাহলে আপনি এর বিনিময়ে আল্লাহর নিকটে অনেক বেশি প্রতিদান পাবেন। এই ধরনের দান আল্লাহতালা পছন্দ করে থাকেন
  • এতিমদেরকে দান করা: এতিমকে দান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। তাই আপনার আশেপাশে যদি কোন এতিম থাকে তাহলে আপনার সাধ্য অনুযায়ী তাকে দান করা উচিত। আপনি যদি এতিমকে দান করেন তাহলে আল্লাহ তা'আলা আপনার উপর সন্তুষ্ট হবেন। এবং আপনি অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন। 
  • বিধবাদের কে দান করা: বিধবা নারীদেরকে দান উচিত। কেননা বিধবা নারীরা সাধারণত অসহায় হয়ে থাকে। সুতরাং আপনি যদি বিধবা নারীদেরকে আপনার সাধ্য অনুযায়ী কিছু দান করেন তাহলে তা আল্লাহ তাআলার নিকটে অনেক পছন্দনীয় হবে। 
  • জনকল্যাণমূলক কাজে দান করা: জনকল্যাণমূলক কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। বিভিন্ন সাহাবীদের জীবনী থেকে জানা যায় তারা নিজেদের সম্পদ থেকে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য বহু সম্পদ ব্যয় করেছেন। 

কিভাবে দান করা উচিত

সমাজে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য কিংবা সুনাম করানোর জন্য সম্পদ দান করলে কোন সাওয়াব পাবেন না। বরং লোক দেখানো দান করলে রিয়ার গুনা হবে। পক্ষান্তরে যদি আপনি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিজের হালাল সম্পদ থেকে গরিব দুঃখী কে দান করেন তাহলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। 
দান প্রকাশ্যেও করা যায় আবার গোপনেও করা যায়। তবে প্রকাশ্যে দান করলে সেখানে লোক দেখানোর সম্ভাবনা থাকে তাই গোপনে দান করাই উত্তম। বছরের যে কোন সময় দান করা যায় তবে রমজান মাসে দান করলে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। তার মানে এই নয় যে আপনি শুধুমাত্র রমজান মাসে দান করবেন না। বরং সারাবছর দান করবেন, আর রমজান মাসে বেশি বেশি দান করবেন। 

দান কেন ও কিভাবে করে

যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম সেই বিষয় সম্পর্কে। উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে, দান কেন ও কিভাবে করে? সে বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। যাইহোক আসুন দেখে নেয়া যাক, দান কেন ও কিভাবে করে? সেই বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

মুসলিমগণ নিজেদের সম্পদ থেকে তার ভাইকে দান করে। কেননা আল্লাহ তায়ালা দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু মহান আল্লাহতালা দান করার নির্দেশ দিয়েছেন তাই অবশ্যই দান করতে হবে। মহান আল্লাহ তা'আলা যেই কাজ করার আদেশ দেন তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে অবশ্য কর্তব্য। 

ইসলামী আইন অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে তার মোট সম্পদের ২.৫% হারে যাকাত প্রদান করতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি হিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হওয়ার পরেও যাকাত প্রদান না করে তাহলে সে ফরজ পালন না করার কারণে গুনাহগার হবে। এবং আল্লাহর নিকটে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।

যাকাত হলো ফরজ বিধান। যাকাত ছাড়াও আরো অন্যান্য দানের কথা পবিত্র কুরআনে এবং হাদিসে রয়েছে। এই দানগুলো হলো ঐচ্ছিক। ঐচ্ছিক দান করারও অনেক ফজিলত রয়েছে। আপনি আপনার সম্পদ থেকে যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করেন তাহলে সেই দান আল্লাহ তায়ালা লালন-পালন করতে থাকেন এবং পরিশেষে সেই দানটি অনেক বড় আকার ধারণ করে। যেমন একটি বকরী লালন পালন করলে বড় হয়। 
যাই হোক বিভিন্ন পদ্ধতিতে দান করা যায়। আপনার আশেপাশে যদি কোন অভুক্ত ব্যক্তি থেকে থাকে তাহলে আপনি তাকে খাদ্য দান করতে পারেন। যদি বস্ত্রহীন কোন ব্যক্তি থাকে তাহলে তাকে বস্ত্র দান করতে পারেন। এমনকি মানুষকে সৎ পরামর্শ দিয়ে এবং বুদ্ধি দিয়েও সহযোগিতা করা যায়। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যেকোনো হালাল বস্তু আপনি দান করতে পারেন। 

ইসলামে দান করার প্রতিদান

যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম, আশা করি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এখানে, পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের আলোকে ইসলামে দান করার প্রতিদান সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরা হবে।চলুন দেখে নেয়া যাক, ইসলামে দান করার প্রতিদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 
 
অনেকেই না জেনে মনে করে থাকেন যে দান করলে সম্পদ কমে যায়। মূলত তা নয় বরং দান করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, "শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহতায়ালা দান করার বিনিময়ে ক্ষমা ও সম্পদ বৃদ্ধির ওয়াদা করেন। বস্তুত আল্লাহপাক সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী" (সূরা বাকারা - ২৬৮)

এই প্রসঙ্গে হাদিসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা:) বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, দান দ্বারা আল্লাহ পাক বান্দার সম্মান বৃদ্ধি করেন। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহতায়ালা তাকে বড় করেন।’ (মুসলিম)। এছাড়াও দান করার আরো অনেক ফজিলত ও মর্তবা রয়েছে। নিচে ইসলামে দান করার প্রতিদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো। 
  • আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন। 
  • সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন। 
  • দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাবেন। 
  • আপনার দান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে। 
  • কেয়ামতের দিন আরশের নিচে ছায়া পাবেন। 
  • জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবেন। 
  • সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। 

শেষ কথা

যেসকল দান সবচেয়ে উত্তম, আশা করি তা জানতে পেরেছেন। কেননা উত্তম দান সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। দান করা ইসলামের অন্যতম একটি বিধান। দান করার মাধ্যমে সমাজের ভারসাম্য রক্ষা পায়। আপনি যদি ইসলামের আইন অনুযায়ী যাকাত প্রদান করেন এবং ঐচ্ছিক প্রদান করে তাহলে সমাজের বৈষম্য থাকবে না। 
এক শ্রেণীর মানুষ অতিমাত্রায় ধনী এবং আরেক শ্রেণীর মানুষ অতিমাত্রায় গরীব হয়ে যাবে না।সমাজের সম্পদের ব্যালেন্স হবে। আর এ কারণেই ইসলামে দান করার ব্যাপারে এত ফজিলতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ১৬৪১৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url