আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি - ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি

প্রিয় বন্ধুরা আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আমরা অনেকেই আঙ্গুর ফল চাষ করতে চায় যার ফলে আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সুবিধার্থে আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কন্টেন্ট সূচিপত্রঃ আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি - ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি

আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি - ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতিঃ ভূমিকা

আঙ্গুর ফল অত্যন্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ এবং আমাদের কাছে জনপ্রিয় একটি ফল। সাধারণত আমরা যখন কোন রোগীকে দেখতে যায় তখন আঙ্গুর ফল নিয়ে যায়। এই আঙ্গুর ফল চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছে। সাধারণত তাই অনেক চাষী রয়েছে যারা আঙ্গুল ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চায়। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি, টবে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি, আঙ্গুর ফল টক, আঙ্গুর ফল মিষ্টি করার উপায়, আঙ্গুর চারা রোপন, আঙ্গুর গাছের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি

আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আগে জানতে হবে যদি আপনি আঙ্গুর ফল চাষ করে লাভবান হতে চান। বাংলাদেশে আঙ্গুর ফল এর চাহিদা অনেক বেশি এবং আঙ্গুর ফলের দাম অন্যান্য ফলের তুলনায় একটু বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া কেউ অসুস্থ হলে আমরা সাধারণত আঙ্গুর ফল নিয়ে দেখতে যায়। নিচে আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আরো পড়ুনঃ মহিলাদের ডান চোখ লাফালে কি হয়

আঙ্গুর ফল চাষের জন্য মাটি নির্বাচন

আঙ্গুর ফল চাষ এর জন্য সাধারণত দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাকর জাতীয় মাটি এ ছাড়া পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙ্গুর চাষ ভালো হয়ে থাকে। মাটি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনাকে দৃষ্টি রাখতে হবে যে জমি যেন উঁচু হয়। যেখানে পানি আটকে থাকবে না এবং প্রচুর পরিমাণে সূর্যের আলো পাওয়া যাবে।

জমি তৈরি

ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটির ঝুরঝুর করে নিতে হবে এরপরে ভালোভাবে গর্ত করে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ইউরিয়া সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। যেন স্যারগুলো মাটির সাথে ভালোভাবে মিশে যায়। তারপর চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপণ করে একটি কাঠি সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে।

সার প্রয়োগ এবং সময়

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চাষ করার উপযুক্ত সময় হল মার্চ এপ্রিল মাস। এই সময় যদি আপনি আঙ্গুর চারা লাগাতে পারেন তাহলে খুব ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সময়টিকে বাংলাদেশের আঙ্গুর চাষিরা আঙ্গুর চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করে।

আঙ্গুর যেহেতু লাগানো গাছ তাই এর বৃদ্ধির জন্য সময় মত বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। আপনি যদি সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে গাছ ঠিকমতো বড় হবে না। রোপনের এক মাসের মধ্যেই গাছ বাড়তি না হলে মাটি আগলা করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। মাঝেমধ্যে গোবর সার, পটাশ এবং ফসফেট প্রয়োগ করতে হবে।

আঙ্গুর গাছের কাণ্ড ছাটাই

রোপন করার পরবর্তী বছর এর শুরুর দিকে আঙ্গুর গাছের মাচা নিতে হবে। এরপরে ফেব্রুয়ারি মাসে মাসাই ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ডগুলোকে ছেঁটে দিতে হবে। কাণ্ড ছাটাই করলে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি ভালো ফল পেতে চান তাহলে অবশ্যই ছাটাই করতে হবে। সর্বনিম্ন আপনাকে তিনবার ছাঁটাই করতে হবে।

আঙ্গুর গাছের রোগ বালাই

আপনি যদি আঙ্গুল গাছের ভালো ফলন পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই পোকামাকড় আক্রমণ এবং এগুলো দমন করার বিষয়ে বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ আঙ্গুর গাছের বিভিন্ন রকম পোকা আক্রমণ করে থাকে যেমন গুবরে পোকা। এরা কচি পাতা গুলো খেয়ে ফেলে পাতার শিরার অংশ বাকি রেখে পুরো পাতা খেয়ে ফেলে। এগুলো দমন করতে হবে।

ফল সংগ্রহ

আঙ্গুর পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করতে হবে। ফল সংগ্রহ করার পর তা বাছাই করতে হবে। তারপর 6 ঘন্টা ধরে এগুলোকে নিম্ন তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে এরপরে বাজারজাত করতে হবে।

ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি - টবে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি

শহরে অঞ্চলের দিকে ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি বেশি অবলম্বন করা হয়। এছাড়া টবে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে ভালো আঙ্গুর চাষ করা হয়। আপনার যদি একটি বড় পরিসরে ছাপ থাকে তাহলে ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকার বাড়ির ছাদে ও অল্পস্থানে আঙুর চাষ করা যায়। চাষ করা সহজ। যে কেউ কাজের ফাঁকে অবসরে চাষ করতে পারেন। আঙুরগাছ ১০০ বছরের বেশি বাঁচে। বছরে দু-তিনবার ফলন দেয়। উৎপাদন খরচ খুব কম। প্রতি গাছে চার-পাঁচ কেজি আঙুর ধরে।

আরো পড়ুনঃ প্রস্টেট ক্যান্সার কেন হয় - প্রস্টেট ক্যান্সার লক্ষণ

বিশ্বে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার আঙুরের জাত আছে। বাংলাদেশে চাষ উপযোগী মিষ্টি জাত হচ্ছে-জাক কাউকঃ বছরে দু’বার জুন-জুলাই ও অক্টোবর-নভেম্বরে ফল দেয়। ফুল থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ১২০ দিন সময় লাগে। ব্ল্যাক পার্লঃ বছরে দু’বার ফলন দেয়। ফলের রঙ কালো। ব্ল্যাক রুবিঃ বছরে দু’বার ফলন দেয়। ফলের রঙ প্রথমে সবুজ পরে কালো হয়। কার্ডিনালঃ ফল কালো লাল মিশ্রিত।

চারা রোপণের সময় এপ্রিল-মে মাস। কাণ্ডের কাটিং, গ্রাফটিং ও বাডিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করার এখনই সময়। বড় ড্রামে বা প্লাস্টিকের পাত্রে শতকরা ৭৫ শতাংশ দোআঁশ মাটি, ২০ শতাংশ পচা গোবর, দুই ভাগ পচা খৈল, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৪০০ গ্রাম এমওপি এক সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন রাখার পর চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ড্রামে চার-পাঁচটি ৩০-৪০ দিন বয়সের সুস্থ সবল চারা রোপণ করতে হবে।

ফুল ও ফল ধরার সময় পরিমিত সেচ দিতে হবে। কাণ্ড মাচায় ওঠার পর ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে প্রধান কাণ্ডের ওপর থেকে ভেঙে দিতে হবে, যাতে কাণ্ডের উভয় দিকে দু’টি করে মোট চারটি শাখা থাকে। শাখাগুলো লম্বা হতে থাকলে ১৫-২০ দিন পর চারটি শাখার ওপরের অংশ ভেঙে দিতে হবে, যাতে চারটি থেকে ১৬টি প্রশাখা গজাতে পারে। বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়ার আশপাশের আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে ডাল ও কাণ্ড ছাঁটাই করলে ফলন বেশি হয়। ফলের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য আঙুরের গুচ্ছ থেকে অপরিণত ফল ছোট অবস্থায় ফেলে দিতে হবে। ফলবতী গাছের ডাল থেকে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার চওড়া বাকল গোলাকারভাবে তুলে ফেললে অথবা জিবরেলিক অ্যাসিড নামক হরমোন স্প্রে করলে আঙুরের ফল ঝরা বন্ধ করে আঙুর মিষ্টি ও বড় হবে এবং ফেটে যাওয়া রোধ হবে।

আঙ্গুর ফল টক

আমরা সবাই একটি কথা জানি যে আঙ্গুর ফল টক। ছোটবেলায় প্রথম যখন আঙ্গুর ফল টক কথাটি শুনেছিলাম তখন এর ভাবার্থ বুঝিনি। মনে হয়েছে আঙ্গুরতো সবসময় মিষ্টি হয় তাহলে টক বলছে কেন? এ বিষয়টি আমাদের সবার মাথায় একবার না একবার এসেছে। কিন্তু এটি যে একটি প্রচলিত গল্প এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে জানতে পেরেছি।

এক শিয়াল আঙ্গুর খাওয়ার আশায় বাগানের কাছে যায় এবং আঙ্গুরের খুব প্রশংসা করে। কিন্তু কারণবশত গাছ থেকে আঙ্গুর পেড়ে খেতে অসমর্থ হয়। ফলশ্রুতিতে আঙ্গুর খেতে না পারার দুঃখে সে সকলের কাছে প্রচার করে আঙ্গুর ফল টক। এই মিথ্যা প্রচারে সত্যিকারে শেয়ালের কোন লাভ হয় না অপরপক্ষে আঙ্গুরের ও কোন ক্ষতি হয় না।কিন্তু সার্বিক পরিবেশের ভারসাম্য কিছুটা বিঘ্নিত হয়।

আঙ্গুর ফল মিষ্টি করার উপায়

আঙ্গুর ফল মিষ্টি করার উপায় গুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই আপনার আঙ্গুর ফল গুলোকে মিষ্টি করে নিতে পারবেন গাছে থাকা অবস্থায়। এর জন্য আপনাকে আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি ভালোভাবে জানতে হবে। তাহলে আপনি আঙ্গুর ফল মিষ্টি করার উপায় গুলো জানতে পারবেন।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩টি উৎপাদনশীল আঙ্গুর গাছের জাত নির্বাচন করা হয়েছে। এই তিনটি জাত গ্রীষ্মকালীন এবং পরে তিনটি রঙে রূপান্তরিত হয়ে যথাক্রমে হালকা বাদাম, কালো এবং এবং করমচা রং ধারণ করে। আঙ্গুর ফল আসতে সময় লাগে প্রায় কয়েক বছর। এ ফলের মিষ্টি হওয়ার পরিমাপ ১৮-২০% হয়ে থাকে।

সাধারণত মাটির পিএইচ এর উপর নির্ভর করে আঙুর ফল কত মিষ্টি হবে। যদি মাটির পিএই ৬.৫-৭.৫ চ হয় তাহলে আঙ্গুর ফল দ্রুত মিষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়া আঙ্গুর গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম ডাল চুনো এবং 50 গ্রাম টিএসপি চার থেকে পাঁচ কেজি পচা গোবর সার দিতে হবে। ফুল আসার পরে থেকে আঙ্গুর মিষ্টি হতে সময় লাগবে প্রায়ই চার মাস।

আঙ্গুর চারা রোপন

আঙ্গুর চারা রোপন সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের ধারণা রাখতে হবে। আপনি যদি সঠিক সময় ছাড়া রোপন করতে পারেন তাহলে আঙ্গুর ফলের ভালো ফলন পাবেন। তাই আপনি যদি আঙ্গুর ফল চাষ করে লাভবান হতে চান তাহলে আঙ্গুর চারা রোপণ সম্পর্কে আপনাকে ধারণা রাখতে হবে। তাহলে চলুন আঙ্গুর চারা রোপন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার যোগ্যতা

ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করবেন তারপর ৭০ × ৭০ × ৭০ সে. মি. মাপের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে ১০/১৫ দিন রেখো দিতে হবে যেন সারগুলো ভালোভাবে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর সংগ্রহীত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস।

আঙ্গুর গাছের দাম

আপনি যদি আপনার নিকটস্থ যেকোনো নার্সারিতে যান তাহলে আঙ্গুর গাছের দাম জেনে নিতে পারবেন। আপনি যদি আঙ্গুর ফল চাষ করতে চান তাহলে যে কোন নার্সারিতে গিয়ে আঙ্গুর ফলের গাছ কিনে নিতে পারবেন এবং সেখান থেকে আপনি দাম জেনে নিতে পারেন। কারণ বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্ন রকম দাম হতে পারে।

আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি - ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতিঃ উপসংহার

আঙ্গুর ফল চাষ পদ্ধতি, ছাদে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি, টবে আঙ্গুর চাষ পদ্ধতি, আঙ্গুর ফল টক, আঙ্গুর ফল মিষ্টি করার উপায়, আঙ্গুর চারা রোপন, আঙ্গুর গাছের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। আপনাকে বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ। ২০৮৭৬

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url