হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে - হুন্ডি কি

হুন্ডি ব্যবসা হল বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় একটা ব্যবসা। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা হুন্ডি কি ও হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে। আমরা আজকের পোস্টে হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে তা নিয়ে জানাবো। হুন্ডি কি ও হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে বিস্তারিত জানতে নিচে পড়ুন। 

হুন্ডি ব্যবসা এখন বাংলাদেশে খুব আলোচিত একটা ব্যবসা। আজকের পোস্ট পড়ে হুন্ডি কি এবং হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে এটা বিস্তারিত জানার সাথে সাথে আরো যেসব জানতে পারবেন তা হলঃ হুন্ডি ব্যবসা কি হালাল, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয় কিভাবে এবং বিকাশে হুন্ডি ব্যবসা সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে

হুন্ডি কি

হুন্ডি একটি শর্তহীন দলিল যাতে একজন ব্যাক্তি তার অর্থ অন্য একজনের মাধ্যমে যেখানে পাঠাতে চায় সেখানে পাঠায়। হুন্ডিকে একটি আর্থিক উপকরণ বা বিনিময়ের একটি আলোচনাযোগ্য বিল বলা জেতে যেতে পারে, যা মধ্যযুগীয় সময়কালে বাণিজ্য ও ঋণের লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হত। একটি হুন্ডি প্রাথমিকভাবে একটি শর্তহীন চুক্তি বা আদেশ যা একটি আর্থিক অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তা দেয় যা বৈধ আলোচনার মাধ্যমে স্থানান্তর করা যেতে পারে। 

হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে

মনে করেন বিদেশে কাজ করা একজন তার পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে চায়। তখন সে যদি হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চায় তাহলে সে একটা হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে যায়। সেই ব্যবসায়ী দেশে তার কোনো এজেন্টকে বলে দেয় যে কোথায় টাকা দিতে হবে। এজেন্ট সে অনুযায়ী সেই বাড়িতে তার টাকা পৌঁছে দেয়। এতে কোনো কোনো সময় ব্যাংকে টাকা পাঠানোর থেকে সময় কম লাগে।

আরো পড়ুনঃ ১২টি বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা ২০২৩ - ব্যবসা করার ১২ টিপস  

এখানে যারা হুন্ডি ব্যবসা করে তারা ডলার রেট ব্যাংকে যে পরিমান দেয় তার থেকে বেশি দেয়। যেমন ১ ডলারে ব্যাংক যদি ১০০ টাকা দেয় তাহলে হুন্ডিতে তারা ১০৫ বা ১১০ টাকা দেয়। এখানে তারা তাদের লাভ একটু কমই রাখে। এভাবে দেওয়ার পর যেটুকু থাকে সেটায় হুন্ডি ব্যবসায়ের লাভ। আর এভাবেই হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে এবং হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয় কিভাবে সেটা জানলাম। 

হুন্ডি কিভাবে কাজ করে?

হুন্ডি মূলত এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ পাঠানোর একটি অনানুষ্ঠানিক মাধ্যম, যা বেশিরভাগ দেশের বিচার ব্যবস্থায় অবৈধ। বিদেশীদের বেশিরভাগই হুন্ডি ব্যবহার করে তাদের উপার্জিত অর্থ তাদের দেশে পাঠাতে। গত কয়েক শতাব্দী ধরে টাকা পাঠানো কম ঝামেলার কারণে অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও হুন্ডি ব্যবসা বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।   

হুন্ডি হল এজেন্টের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর একটি মাধ্যম । এই ক্ষেত্রে একজন প্রবাসী হুন্ডি এজেন্টকে ডলারের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলে। সেই সময়ে এজেন্ট দেশের অন্য এজেন্টকে বলে যে টাকা নিতে এবং প্রবাসীর পরিবারের সদস্য বা যে কেউ তা পৌঁছে দেয়।    

হুন্ডি দেশের অর্থনীতিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। কারণ কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে ডলার পাঠানো হয় না। তাছাড়া কেউ যদি বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে বা পণ্য আমদানির জন্য অর্থ প্রদান করতে চায়, তাহলে বিভিন্ন ব্যাংকিং বাধা এড়াতে হুন্ডি ব্যবহার করা হয়। 

বাংলাদেশে হুন্ডি এত জনপ্রিয় কেন? 

আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং এর চেয়ে হুন্ডি আরও সুবিধাজনক এবং দ্রুত। জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি ২০২০ বলছে যে ২৫.৩৪% বাংলাদেশি নিরক্ষর বা লেখা পড়া জানে না। গ্রামীণ পরিবেশে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আদমশুমারিতে দেখা গেছে গ্রামের ২৮.৪৪% গ্রামীণ মানুষ নিরক্ষর।     

তারা লিখতে ও স্বাক্ষর করতেও জানে না। ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেন করা তাদের জন্য একটি জটিল কাজ কারণ এতে অনেকগুলি কাগজপত্র এবং আনুষ্ঠানিকতা জড়িত থাকে যার জন্য টাকা পাঠাতে অনেক দিন লাগতে পারে। ব্যাংকাররা টাকা তোলার সময় অনেক প্রশ্ন ও করে। 

আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের হাত পা কাপে কেন - হাত কাপে কেন 

অন্যদিকে, হুন্ডিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম পদ্ধতি রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া একদিনের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে। আর হুন্ডি টাকা ট্রান্সফারের জন্য নিরাপদ। তাই বাংলাদেশে হুন্ডি এত জনপ্রিয়। হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে হলে হুন্ডি কি, হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে, হুন্ডি ব্যবসা কি হালাল, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয় কিভাবে এবং বিকাশে হুন্ডি ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হবে। 

বিনিময় হারের পার্থক্য

স্থানীয় বাজার এবং ব্যাংকের বিনিময় হার এক নয়। হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংকে, বর্তমান বিনিময় হার ৯৫ টাকা যেখানে স্থানীয় ব্যাংকগুলি ৯৫ টাকায় ডলার বিনিময় করছে এবং কার্ব মার্কেট এটি প্রতি ডলার ১০৫ টাকার উপরে বিক্রি করে।   

যদি কোনো ব্যক্তি বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে $100 পাঠান, তাহলে সেই $100টি বাংলাদেশের ৯৭০০ টাকার সাথে বিনিময় করা হবে। 2.5% সুদ যোগ করলে পরিমাণ হবে ৯৯৪২ টাকা। ফি নেওয়ার পর এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৯,৯০০ টাকা।

কিন্তু কেউ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে পায় পাবেন ১০,৫০০ টাকা। হুন্ডি সিস্টেম কার্ব মার্কেট অনুযায়ী মুদ্রা বিনিময় করে। তাই বেশি টাকা পাওয়ার জন্য মানুষ ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর করতে পছন্দ করে। বেআইনি জেনেও লেনদেনের কোনো প্রমাণ না থাকায় তারা হুন্ডি ব্যবহার করছে।

অর্থ পাচার করা

যেহেতু হুন্ডি অর্থ লেনদেনের রেকর্ড থাকে না। তাই সরকারি তহবিলের অপব্যবহার এবং বিদেশে পাঠানোর জন্য হুন্ডি হল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হাতিয়ার। বিশেষ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দেশে সংরক্ষণের ঝুঁকির কারণে বিদেশে অর্থ পাচার করেন। হলমার্ক, ডেসটিনি এবং পিকে হালদারের বহু-হাজার কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারী এবং মানি লন্ডারিং কেস সামনে এসেছে। 

যেখানে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে বিডিটি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অর্থ পাচারের এই ধরনের ক্ষেত্রে, তারা অর্থকে ভুল জায়গায় রাখার জন্য হুন্ডি ব্যবহার করে কারণ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করা হলে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে। আজও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় রপ্তানির জন্য হুন্ডি ব্যবহার করেন। ফলে অপর্যাপ্ত রপ্তানি আয়ের কারণে দেশের বৈদেশিক রিজার্ভও দিন দিন কমছে।  

প্রবাসীদের হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো বৈধ না অবৈধ  

বর্তমানে লাখ লাখ বাংলাদেশি বৈধ পথে বিদেশে অবস্থান করছেন এবং কর্মরত আছেন। তারপরও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনকারী বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা মোটেও কম নয়। যেহেতু এই অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ কাগজপত্র এবং ভিসা নেই। তাই ধরা পড়ার ভয়ে তাদের ব্যাংক বা অন্য কোনও সরকারী চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের বিকল্প নেই। তাই তারা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের চেষ্টা করে। 

আরো পড়ুনঃ amazon থেকে পণ্য কেনার উপায় - অনলাইনে কিভাবে অর্ডার করতে হয় 

এছাড়াও স্টুডেন্ট ভিসায় বসবাসকারী প্রবাসীরা সে দেশের আইন অনুযায়ী দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারবেন না। যাইহোক তাদের অনেকেই আইনি কাজের সময় ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ সময়, কখনও কখনও দিনে ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে এবং তাদের আয় উপার্জন করে। 

এ কারণে তারা দেশে টাকা পাঠাতে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে পারে না। কারণ এই আয়ের কোনো আইনি দলিল থাকে না। কাজেই এসব অবৈধ চাকরিজীবীদের দেশে টাকা পাঠাতে হুন্ডি ব্যবহার করতে হবে। এটা পড়ে আমরা হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে, হুন্ডি ব্যবসা কি হালাল, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয় কিভাবে এবং বিকাশে হুন্ডি ব্যবসা জানতে পারি। 

হুন্ডি ব্যবসা হালাল না হারাম 

আমরা আল্লাহ্‌র প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে পথ দেখান তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে তিনি পথভ্রষ্ট হতে দেন তাকে কেউ সৎপথে পরিচালিত করতে পারে না। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কেউ নেই এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর রসূল।  

হুন্ডি বা ব্যাংকের সুদ ব্যতীত এক মুদ্রা থেকে অন্য মুদ্রায় অর্থ স্থানান্তর শরীয়ত মতে হারাম ও হালাল বিষয় নয়। যদি এটি এমন একটি জিনিস হয় যা দেশের আইনের সাথে সম্পর্কিত যেখানে আপনি বসবাস করেন। যদি কেউ এমন একটি দেশে বাস করে যেখানে অবাধে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, প্রেরণ এবং গ্রহণ করা বেআইনি নয়, তবে এতে কোন ক্ষতি নেই।  

কিন্তু যদি কেউ এমন একটি দেশে বাস করে যেখানে তাদের সরকার অনুমোদিত চ্যানেল ছাড়া অবাধে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করা, প্রেরণ করা বা গ্রহণ করা অবৈধ, তবে সে দেশের আইন ভঙ্গ করা একজন বিশ্বাসীর পক্ষে উচিত নয় আর ইসলামে দেশকে ভালবাসতে বলা হয়েছে দেশের সব আইন কানুন মেনে চলা আপনার কর্তব্য। তাহলে এখান থেকে আমরা জানতে পারি যে হুন্ডি ব্যবসা কি হালাল, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয় কিভাবে এবং বিকাশে হুন্ডি ব্যবসা। 

হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে - শেষ কথা

প্রবাসীরা তাদের উপার্জন করা ডলারের পরিবর্তে বেশি টাকা পেতে বা তাদের পরিবারের কাছে তারা যত ইচ্ছা তত টাকা পাঠাতে হুন্ডি ব্যবহার করে থাকে। আর একই কারণে হুন্ডি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনারা আমাদের আজকের এই পোস্ট পড়ে হুন্ডি কি এবং হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন। সেগুলো হলঃ হুন্ডি ব্যবসা কি হালাল, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয় কিভাবে এবং বিকাশে হুন্ডি ব্যবসা ইত্যাদি।[জব আইডি=২২৪৯৮] 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • raihan
    raihan ১৩ জুলাই, ২০২৩ এ ৩:১০ PM

    বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হুন্ডি ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ। যা বাংলাদেশের জন্য অনেক ক্ষতি বিশেষ করে অর্থনীতি তে। তাই হুন্ডি থেকে দূরে থাকুন সবাই

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মিহি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url