অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস - 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতির ব্যবহার
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের অধিকতর সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতির ব্যবহার করা প্রয়োজন। হ্যাকারদের হ্যাকিং রক্ষার্থে এবং আমাদের ব্যক্তিগত অথবা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের তথ্য চুরি রোধে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতির প্রয়োজন। এছাড়াও অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষার্থে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি চালু করেছে।
পেজ সুচিপত্রঃ
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কি
অ্যান্ড্রয়েড একটি অপারেটিং সিস্টেম সফট্ওয়ার। আর যে ডিভাইসের মধ্যে এই সিস্টেম সফট্ওয়ার চালু করা হয়ে তাকে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বলে। এটি হতে পারে স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, পিসি অথবা কোন ই - বুক রিডার। অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে - এলজি, সনি - এরিকসন, স্যামসাং ইত্যাদি।
2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি কি
2FA হলো টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দুই ধাপের নিরাপত্তা বলয়। এটি এমন একটি পদ্ধতি যে, অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে চালু থাকলে আপনি ডিভাইসে প্রবেশ করার আগ মুহূর্তে আপনাকে সতর্ক করবে। হ্যাকাররা কিভাবে এবং কত উপায়ে আপনার ডিভাইস থেকে তথ্য চুরি করতে পারে তার উপর ভিত্তি করে অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি চালু করেছেন।
2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি চালু থাকলে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে। এই অতিরিক্ত এক্সেস ছাড়া শুধুমাত্র আইডি পাসওয়ার্ড চুরি করে হ্যাকাররা আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে লগ - ইন করতে পারবে না। ফলে আপনার ডিভাইসের তথ্য চুরি হয়ে যাওয়া হতে রক্ষা পাবেন।
2FA এর জন্য আপনি কি পদ্ধতি ব্যবহার করবেন
- ক্ষুদে বার্তা
একাউন্টে লগ-ইন করার সাথে সাথে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতির প্রথম ধাপে একটি ক্ষুদে বার্তা (টেক্স ম্যাসেজ) আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সাথে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে চলে যাবে। এর জন্য আপনার লাগবে একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ও একটি সচল সিম কার্ড। কিন্তু এটি পুরোপুরি ঝুকিঁমুক্ত নয়। কারণ যেকোন ব্যক্তি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসটি হাইজ্যাক বা চুরি হতে পারে এবং অবৈধভাবে ব্যবহার করতে পারে। ফলে আপনি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তবুও এটি আপনি সাময়িক নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
- যাচাইকরণ কোড
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে একটি ০৬ সংখ্যার যাচাইকরণ কোড তৈরী করে উক্ত কোডটি ব্যবহার করে আপনি আপনার ডিভাইসে এক্সেস করতে পারবেন। এটি হতে পারে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের নিরাপত্তার জন্য 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপ।
- বায়োমেট্টিক 2FA যাচাইকরণ
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে বায়োমেট্টিক 2FA যাচাইকরণের জন্য প্রয়োজন হলো আপনার চোখের রেটিনা বা আঙ্গুলের ছাপ। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ক্যামেরা দ্বারা অথবা হাতের আঙ্গুলের ছাপ দ্বারা যাচাইকরণের মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভাইসে এক্সেস করতে পারবেন। আপনার অনুপস্থিতিতে অন্যকেউ আপনার ডিভাইসে এক্সেস করতে পারবে না।
পদ্ধতিগুলো কতটুকু নিরাপদ
উপর্যুক্ত পদ্ধতিগুলোর যেকোন একটি পদ্ধতি আপনি ব্যবহার করলে একটি সাধারণ একাউন্টের থেকে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি ব্যবহারকৃত একাউন্টটি বেশী নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। উপর্যুক্ত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বায়োমেট্টিক 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি সবচেয়ে নিরাপদ।
2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি চালু থাকলে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কিংবা সিম কার্ড হারিয়ে গেলেও কোন সমস্যা হবে না। কারণ আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে প্রবেশ করতে হলে আপনার চোখের রেটিনা অথবা আঙ্গুলের ছাপের দরকার হবে। যেটি আপনার উপস্থিতি ছাড়া অসম্ভব। সুতরাং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করলে আপনার ডিভাইসকে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করবে।
2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতির অনুশীলন
আপনি শুধু আপনার অ্যান্ড্রয়ে ডিভাইসে লগ-ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নিরাপদ থাকতে পারবেন না। বিভিন্ন নিরাপত্তা বিভাগ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, হ্যাকাররা খুব সহজেই আপনার ডিভাইসে এক্সেস করতে পারে। এর মানে এই নয় যে, 2FA যাচাইকরণ পদ্ধতি ফলপ্রসু নয়। এটি আপনার একাউন্টকে একটি সাধারণ একাউন্ট থেকে অধিক নিরাপদ রাখবে। এজন্য আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ও আপনার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে আপনি 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
অধিক নিরাপত্তার জন্য কি করবেন
- আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতির জন্য আপনার বহুল ব্যবহৃত ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ব্যবহার করবেন না। এর পরিবর্তে আপনি একটি গুগল ভয়েস নম্বর সেটআপ করুন যেটি আপনি সর্বদা রাখতে পারেন।
- ই-মেইল ভিত্তিক একাউন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না। ই-মেইলের মাধ্যমে আপনার একাউন্ট পুনঃস্থাপন করা বেশ সুবিধাজনক ও সহজ।
- আপনি একাধিক 2FA যাচাইকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। আপনি যত বেশী যাচাইকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন আপনার একাউন্ট ততবেশী নিরাপদ থাকবে।
ই-কমার্স জালিয়াতি রোধে 2FA যাচাইকরণ অপরিহার্য একটি পদক্ষেপ। এটি এজন্য অপরিহার্য যে, একজন প্রতারক যাতে আপনার বিনা অনুমতিতে আপনার ব্যক্তিগত ডিভাইস বা ব্যাংক একাউন্ট জালিয়াতি করতে না পারে।
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস-2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি চালু করার নিয়ম
প্রথমে গুগল অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করুন।এবার যখন অন্য কোন ব্যক্তি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে আন-অথরাইজড কোন ডিভাইস দিয়ে লগ-ইন করার চেষ্টা করবেন, তখন একটি নিরাপত্তা কী চাইবে। উক্ত কী প্রবেশ করানো সাপেক্ষে আপনি আপনার কাঙ্খিত ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারবেন।
জি-মেইলে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার নিয়ম
- Chrome বা অন্য কোন ব্রাউজারের মাধ্যমে আপনাকে আপনার ডিভাইসে জি-মেইল লগ-ইন করে রাখতে হবে। এখন google.com এ প্রবেশ করবেন। এরপর আপনার ডিভাইসের ডানপার্শ্বে আপনার প্রোফাইল পিকচার দেখতে পারবেন। উক্ত পিকচারের উপর ক্লিক করুন।
- ম্যানেজ করুন অপশনে চাপুন
- আপনার একাউন্টের নিরাপত্তা অপশনে প্রবেশ করতে হবে।
- ২ স্টেপ ভেরিফিকেশন অফ দেখতে পাবেন। উক্ত ভেরিফিকেশন অন করতে উক্ত অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- শুরু করুন অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- এখন আপনার জি-মেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড দিয়ে Next বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- এরপর চালিয়ে যান অপশনে ক্লিক করুন
- এরপর একটি অপশন আসবে এবং আপনার মোবাইলে ০৬ ডিজিটের কোড সম্বলিত কল অথবা টেক্সট ম্যাসেজ যাবে। উক্ত কোডটি নির্দিষ্ট ঘরে বসাতে হবে।
- নির্দিষ্ট ঘরে কোডটি বসান।
- এখন আপনি চালু করুন অপশনে ক্লিক করুন
- পুণরায় মেইলের পাসওয়ার্ড দিয়ে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করুন এবং পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
- এরপর চালু করুন অপশনে ক্লিক করলে ২ স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু হয়ে যাবে।
এটা হলো জি-মেইলে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার নিয়ম। এভাবে আপনি সহজেই ২ স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনার কাঙ্খিত জি-মেইল একাউন্টটি নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে।
সবশেষে বলা যায়, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি অতি প্রয়োজনীয় একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে 2FA প্রমাণীকরণ পদ্ধতি চালু থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন না।
অনেক ভালো